ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এ বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রায় ৪০-৪৪টি সংশোধনী যুক্ত করে খসড়া অধ্যাদেশ ও আচরণবিধির খসড়া অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ জানান, সংশোধিত আরপিও ২০২৫ এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে এটি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন হবে এবং রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কার্যকর হবে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর মধ্যে রয়েছে:
‘না’ ভোটের বিধান: শুধু একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের সুযোগ থাকবে। আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকলেও এখন ‘না’ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
সমভোটে পুনঃনির্বাচন: আগে সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হতো। এখন পুনঃনির্বাচনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
প্রার্থীদের জামানত: ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব।
সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও কোস্টগার্ডকে যুক্ত করা হয়েছে।
ইভিএম বিলুপ্তি: ইভিএম সংক্রান্ত সব বিধান বাতিল করা হয়েছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার: অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রস্তাব।
ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা পুনঃস্থাপন: অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের নির্বাচন বা ফলাফল বাতিল করতে পারবে।
সংবাদকর্মীদের কেন্দ্রে প্রবেশ: গণনা শুরুর সময় থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকার শর্তে সংবাদকর্মীদের কেন্দ্রে প্রবেশের বিধান।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে শাস্তি: আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব।
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য: নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি মিথ্যা তথ্য প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান।
ডোনেশন সীমা: ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে অনুদানের সর্বোচ্চ সীমা সমান করে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। লেনদেন হবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এবং আয়কর রিটার্নে তা দেখাতে হবে।
এআই ও ডিজিটাল অপপ্রচার: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অপপ্রচার চালালে দল, প্রার্থী বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান।
আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিকে ভোটে অযোগ্য রাখার প্রস্তাবও যুক্ত করা হয়েছে, যদিও ইসি আগে এর বিরোধিতা করেছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত কোনো শর্ত রাখা হয়নি।
তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোটের ‘সার্টিফিকেট’ দেওয়ার সুপারিশ, কিংবা ইসির জবাবদিহিতা সংক্রান্ত কিছু সংস্কার প্রস্তাবে রাখা হয়নি।
ইসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনি সংস্কার চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। এরই মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সংশোধনীগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।