তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, দেশে যে সংস্কার উদ্যোগ চলছে তা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “পুরো জিনিসটা যমুনার (প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন) দেয়ালের মধ্যে আটকে আছে।”
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজি বাস্তবায়নের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামে নতুন একটি উদ্যোগেরও সূচনা করা হয়।
হোসেন জিল্লুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। এখন জরুরি হয়ে পড়েছে—মানুষ সংস্কার থেকে কী পেল, কোথায় ব্যর্থতা হলো, তার খতিয়ান নেওয়া।
তিনি আরও বলেন, “সংস্কারের অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব উদ্যোগের চরিত্র ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করবে আমরা কীভাবে এগোবো তার ওপর। মানুষ আশা করেছিল কর্তৃত্ববাদী শাসনের মূল স্তম্ভগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হবে। প্রতিনিধিত্বশীল রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে, নির্বাচনকে কার্যকর করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি চায় এবং অলিগার্ক-নির্ভর অর্থনৈতিক মডেল থেকে মুক্তি চায়।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে হোসেন জিল্লুর বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, এক পুলিশ কমিশনার গুলশান থেকে গাজীপুর যাওয়ার জন্য পুরো এক ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখেন। এতদিন পর এসে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে কেবল আলোচনা হচ্ছে—তাকে কারণ দর্শানো হবে কি না। অথচ, খবরটি প্রকাশের দিনই সত্যতা যাচাই করে ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল। দায়িত্বে থেকে উদাসীনতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি মনে করেন, সংস্কার উদ্যোগের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ ও গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। কেবল উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকলে তা কার্যকর হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হোসেন জিল্লুরের এ মন্তব্য বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা এবং জনগণের মধ্যে বাড়তে থাকা অসন্তোষের প্রতিফলন। আগামী দিনের গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে এই সতর্কবার্তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।