সর্বশেষ

ঈদের দিনে অর্ধশত শহীদ

ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:২০
ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা
ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নের শাহনগরের বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধ

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা ফটিকছড়ি এলাকায় চালায় ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের নামাজ শেষে মানুষ যখন আনন্দ ভাগাভাগি করছিলেন, তখনই তারা শাহনগর নাথপাড়া ও আশপাশের গ্রামগুলো ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ দিতে চাপ সৃষ্টি করে, কিন্তু কেউ তথ্য না দেওয়ায় শুরু হয় লুণ্ঠন ও নির্যাতন।

 

সেদিন ১৭ পরিবারের ছাত্র ও যুবক বয়সি ৩০ জনকে ধরে স্থানীয় মনাইছড়ি খালের পাড়ে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। পরে তাদের মাটিচাপা দিয়ে চলে যায়। কিছু সময় পর গ্রামবাসী গিয়ে দেখেন, গুলিবিদ্ধ একজন জীবিত আছেন। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও বাকি ২৯ জন শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে ছিলেন মো. জহুরুল ইসলাম, মো. ইউনুছ, মো. জমিল উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ, মো. এয়াকুব, মো. নুরুল আলম, তোফায়েল আহম্মদ, রুহুল আমিন, ফয়েজ আহমেদ, জাগের আহমেদ, আবছার আহম্মদ, নুরুল ইসলাম, চিকন মিয়া, জহুর আহম্মদ, ইদ্রিস, সোলাইমান, রফিকুল আলম, বজল আহম্মদ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, রমেশ চন্দ্র নাথ, কৃষ্ণ হরি নাথ, শুধাংশু বিমল নাথ, হরিপদ নাথ, হরি লাল নাথ, বিপিন চন্দ্র নাথ, সুবেন্দ্র লাল নাথ, হরিধন নাথ, নগর বাঁশি নাথ ও গৌর হরি নাথ।

 

একই দিনে সীমান্তবর্তী দুর্গম ইউনিয়ন কাঞ্চননগরে পাক বাহিনী আরেকটি হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ গ্রামের বিএ পাস যুবক হেদায়তুল ইসলাম চৌধুরী ও অজ্ঞাত আরেক যুবককে রক্তছড়ি খালের পাড়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। এরপর দক্ষিণ কাঞ্চননগরের গোমস্তা পুকুরপারে নিরীহ ৯ বাঙালিকে এক রশিতে বেঁধে ব্রাশফায়ার করে। এতে সাতজন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আহমেদ হোসেন ও বদিউল আলম। শহীদদের মধ্যে ছিলেন নুরুল আলম, ভোলা, বানু হোসেন, ভোলা ওরফে ভোলাইয়্যা, জেবল হোসেন, ইসলাম ও কালা মিয়া।  

 

ফটিকছড়ির নানুপুর বিনাজুড়ি খাল, রোসাংগীরীর আজিমনগর, লেলাং, কাঞ্চননগর, নিউ দাঁতমারা চা বাগান, উদলিয়া চা বাগান, দাঁতমারা উল্টা ভিটা, হেয়াকো সওজ অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে লেলাং, কাঞ্চননগর ও নিউ দাঁতমারা চা বাগানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও অন্যান্য স্থানের বধ্যভূমি এখনো অবহেলিত ও অরক্ষিত।  

 

ফটিকছড়িতে প্রায় এক ডজন বধ্যভূমি রয়েছে। স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরেও অধিকাংশ বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন, উপজেলা ও স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে এসব ঐতিহাসিক স্থান অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

নেই কোনও স্মৃতিচিহ্ন জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলো বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

‘দেশ স্বাধীন করার শাস্তি’ কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

রায়েরবাজারে জনসমাগম কম, তবু উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রায়েরবাজারে জনসমাগম কম, তবু উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার

প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি

প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি

পরাজয় যতই স্পষ্ট, বুদ্ধিজীবী অপহরণের মাত্রা বাড়তে লাগল

একাত্তরের এই দিন | ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ পরাজয় যতই স্পষ্ট, বুদ্ধিজীবী অপহরণের মাত্রা বাড়তে লাগল

বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহর, ঢাকা দখলের লড়াই তীব্র; দেশজুড়ে মুক্তিবাহিনীর বিজয় অগ্রযাত্রা

একাত্তরের এইদিন | ১২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহর, ঢাকা দখলের লড়াই তীব্র; দেশজুড়ে মুক্তিবাহিনীর বিজয় অগ্রযাত্রা