সর্বশেষ

পুলিশকে ‘দেখামাত্র গুলি’ নির্দেশে মানবাধিকারকর্মীদের তীব্র সমালোচনা

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০০
পুলিশকে ‘দেখামাত্র গুলি’ নির্দেশে মানবাধিকারকর্মীদের তীব্র সমালোচনা

দেশে চলমান অস্থিরতার মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পুলিশ কমিশনারদের ‘দেখামাত্র গুলি’ বা প্রয়োজন হলে গুলি চালানোর নির্দেশকে গভীর উদ্বেগ ও মানবাধিকারবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, এই নির্দেশ সংবিধান, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থি এবং বিচারবহির্ভূত সহিংসতাকে উৎসাহিত করে।

 

গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ ওয়্যারলেস বার্তায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র ‘ব্রাশফায়ার’ করার নির্দেশ দেন। রবিবার একই ধরনের নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, ককটেল হামলা বা অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধেই এই নির্দেশ, “জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য আইনসম্মতভাবেই গুলি করতে বলা হয়েছে।”

 

তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এমন নির্দেশ শুধু দায়িত্বহীনই নয়, বরং সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকারকে সরাসরি লঙ্ঘন করে। সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৩ অনুচ্ছেদে নাগরিকের আইনি নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও ন্যায্যবিচারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আইন, দণ্ডবিধি বা ফৌজদারি কার্যবিধির কোনও ধারাই “দেখামাত্র গুলি” বা বিচারবহির্ভূত বলপ্রয়োগকে অনুমতি দেয় না।

 

মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়মনীতি আছে। ওয়্যারলেসে ব্রাশফায়ারের নির্দেশ দেওয়া দায়িত্বহীনতার শামিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ১৭ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা চার হাজারের বেশি এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে এ ধরনের নির্দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি আরও বাড়াবে।

 

মানবাধিকারকর্মী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, “জননিরাপত্তার নামে বিচারবহির্ভূত গুলি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সহিংসতা বাড়ায়, জবাবদিহি কমায় এবং নাগরিকদের মনে ভয় তৈরি করে।”

 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুন মাহবুবের মতে, এই নির্দেশ সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল এবং রাষ্ট্র নিজেই আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে।

 

এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে এই নির্দেশকে “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহিত করার শামিল” বলে উল্লেখ করেছে। সংস্থাটি সরকারের প্রতি জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলে, রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করা, ভয় সৃষ্টি করা নয়।

 

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিমত, এ ধরনের নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার না হলে ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত প্রাণহানি ও আইনের শাসনের অবক্ষয় আরও গভীর হতে পারে।

সব খবর

আরও পড়ুন

ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

ঈদের দিনে অর্ধশত শহীদ ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

নেই কোনও স্মৃতিচিহ্ন জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলো বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

‘দেশ স্বাধীন করার শাস্তি’ কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

রায়েরবাজারে জনসমাগম কম, তবু উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রায়েরবাজারে জনসমাগম কম, তবু উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার

প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি

প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি

পরাজয় যতই স্পষ্ট, বুদ্ধিজীবী অপহরণের মাত্রা বাড়তে লাগল

একাত্তরের এই দিন | ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ পরাজয় যতই স্পষ্ট, বুদ্ধিজীবী অপহরণের মাত্রা বাড়তে লাগল