সর্বশেষ

শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে নীরবে চলছে সংখ্যালঘু নিধন

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:১২
বাংলাদেশে নীরবে চলছে সংখ্যালঘু নিধন

রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নিপীড়ন চালানো হয়েছে।

 

৭ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তার স্ত্রী সুবর্ণা রায় (৬০)-এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এর আগে ৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরে মাছ ব্যবসায়ী উত্তম সরকারকে হত্যা করা হয়। ২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ী প্রান্তোষ কর্মকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আগস্টে মুন্সীগঞ্জে সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারকে হত্যা করা হয়। এ ধরনের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতাকে আরও প্রকট করেছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানে হামলা বেড়েছে। নভেম্বর ও অক্টোবর মাসে ঢাকার দুটি গির্জায় ককটেল হামলা হয়। রাজশাহীতে সুফি মাজারে ভাঙচুর, চট্টগ্রামে বৌদ্ধ মন্দিরে ডাকাতি এবং রাজবাড়ীতে আহমদিয়া জামাতের নামাজকেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলা শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতাকেই নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতিকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর অন্তত ২৫৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৭টি হত্যাকাণ্ড, ২০টি নারী নির্যাতন, ৫৯টি ধর্মীয় স্থানে হামলা, ২৭টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ১২টি জমি দখল এবং ১৬টি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনা রয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২,১৮৪টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়। অর্থাৎ রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সহিংসতা আরও বেড়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু মানুষ নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পারিবারিক ভিটা ভেঙে ফেলা হয়। জুনে সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারিবাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদকে আঘাত করছে।

 

হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছে। আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। নতুন ব্যাংকনোটে হিন্দু ও বৌদ্ধ স্থাপনার ছবি থাকায় প্রতিবাদ হয়েছে। একইসঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও হিজবুত তাহরীর নতুন করে প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছে। এতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

 

লেখক সঞ্চিতা ভট্টাচার্যর মতে, সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতার ফল নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দায়মুক্তি ও দুর্বল আইন প্রয়োগের কারণে এটি আরও বেড়েছে। তিনি সতর্ক করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।

সব খবর

আরও পড়ুন

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে জরুরী তলব

নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে জরুরী তলব

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনো পরাজিত শক্তি বদলাতে পারবে না’

বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে মানুষের দৃঢ় প্রত্যয় ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনো পরাজিত শক্তি বদলাতে পারবে না’

বাংলাদেশ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে

শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বাংলাদেশ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে

ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

ঈদের দিনে অর্ধশত শহীদ ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

নেই কোনও স্মৃতিচিহ্ন জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলো বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

‘দেশ স্বাধীন করার শাস্তি’ কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস