ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবার দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পর দেশে সরকার পরিবর্তিত হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই সময় ভারতের কৌশল শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভারতের প্রভাবকে প্রভাবিত করতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক গত ১৫ বছরে দৃঢ় হয়েছে। সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ প্রকল্প এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৬০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করে।
কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি ৬.১ শতাংশ থেকে কমে আনুমানিক ৩.৫ শতাংশে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২.১ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩২ মিলিয়ন তরুণ শিক্ষার বাইরে বা বেকার। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সালে আরও তিন মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়তে পারে। অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারত্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চরমপন্থার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও জোরদার হয় যখন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও রাজনৈতিক দলগুলোর উপর হামলার ঘটনা বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের আগস্টে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ২,০০০টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হত্যা ও বিরোধী দলের অফিসে হামলা নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
ভারতের জন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ও ঋণও ভারতের নজরদারির বিষয়। ২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশের চিফ অ্যাডভাইজার চীনে $২.১ বিলিয়ন ঋণ ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছেন। চীন দেশের অবকাঠামো ও শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করছে। ভারতের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বঙ্গোপসাগরে সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারত সবসময় স্বীকার করেছে যে, বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব দেশের সার্বভৌম অধিকার। তবে ভারত চীনের অবকাঠামো বিনিয়োগ, বন্দর, টেলিকম এবং শক্তি খাতে নজর রাখছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য ও তরুণ বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নতুন উদ্বাস্তু সংকট ও অভিবাসনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে এর প্রভাব কেবল দুই দেশের সম্পর্কেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাতেও পড়তে পারে। তাই ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ, সীমান্ত নিরাপত্তা ও সামাজিক সহযোগিতা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকঃ হর্ষবর্ধন শ্রীংলা
ভারতের রাজ্যসভা সদস্য, প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার