বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে এবং মৌলবাদীরা আজকাল মানুষের কাছে ‘বেহেশতের টিকেট’ বিক্রি করছে। তিনি বলেন, “আপনারা যাদের মৌলবাদী বলেন, আমি তাদের মৌলবাদী বলি। তারা এখন বেহেশতের টিকেট বিক্রি করতেছে। অর্থাৎ, তাগো লগে থাকলে আপনি বেহেশতে যাবেন, না থাকলে দোজখে যাইবেন। কিন্তু নিজেরা বেহেশতে যাইব কি না, তা তারা জানে না।”
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে হিউম্যান রিসার্চ অ্যান্ড এনালাইসিস ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব ও আগামীর গণতন্ত্র ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাম্প্রদায়িক উত্থানের হুঁশিয়ারি
গয়েশ্বর বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে এখন সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র উন্মাদনার উত্থান শুরু হয়েছে, যেটার মধ্য দিয়ে মব তৈরি হয়। রাষ্ট্র যদি গণতন্ত্রের পথে না থাকে, তাহলে সাম্প্রদায়িকতা ফ্যাসিবাদের চেয়ে দ্বিগুণ ভয়াবহ হয়ে জনজীবন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আধুনিক বিশ্বে মুক্ত চিন্তা ও প্রতিভার বিকাশ সাম্প্রদায়িক শক্তি হতে দেবে না। বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। ধর্ম মানুষকে সঠিক পরিচালনার জন্য জীবনব্যবস্থা দেয়। ধর্মে যা পাপ, আধুনিক রাষ্ট্র আইনে তা-ই অন্যায়। সেই অন্যায়ের শাস্তি আইনেও নির্ধারিত আছে।”
সরকারের সমালোচনা
সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “হাসিনা সরকার ছিল ফ্যাসিবাদ। এখনকার সরকার কোনো বাদে পড়ে না। সরকারের কাজকর্ম চোখে পড়ে না। কয়েকজন ছাড়া আর কেউ কথা বলে না। সবকিছু চালাচ্ছে শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া প্রশাসন।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আজকে সচিবালয়ে এত বিএনপি, এত জামায়াত কেমনে রইল? হাসিনার আমলে তো প্রায়ই পোস্টমর্টাম করে বের করে দিত।”
মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে ক্ষোভ
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, “এখন মিডিয়া স্বাধীন হয়েছে বলা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যার যা খুশি তাই বলছে। ভোটের মতো—আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। কিন্তু এভাবে চললে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে ভয়ংকর উপসর্গ তৈরি হচ্ছে।”
পিআর পদ্ধতি নিয়ে মন্তব্য
সংখ্যানুপাতিক জনপ্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র মানে জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গড়বে। ভুল মনে করলে পরের ভোটে বাদ দেবে। কিন্তু এই সহজ পথটা আমরা নিতে পারি না। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের গান গাইতে গাইতে কুসংস্কারে পরিণত করেছে। বিদেশ থেকে বুদ্ধিমান লোক এনে বসানো হয়েছে, আর সেই কারণে পিআরের মতো জটিল পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি মজা করে বলেন, “শুনতেছি নেপালে এই পদ্ধতি আছে, এজন্য সকাল-বিকেল প্রধানমন্ত্রী পাল্টায়। পাকিস্তানেও এমন অবস্থা ছিল যে সকালে একজন মন্ত্রী, রাতে আরেকজন।”
আত্মসমালোচনা
নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, “আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমরা সবাই এমপি হতে চাই। এলাকার মধ্যে কাঁদাছুড়াছুড়ি করি, সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরকে আক্রমণ করি। এতে রাজনীতি জনকল্যাণমূলক থাকে না, ব্যক্তিস্বার্থে চলে যায়। জনগণ তখন আমাদের দিকে তাকিয়ে আর থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি যদি কেবল ধনীদের পেশা হয়ে যায়, তাহলে গণতন্ত্র টিকবে না। আমাদের একসঙ্গে বলতে হবে—আমরা গণতন্ত্র চাই, জনগণের অধিকার চাই, এর বাইরে কিছু না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক আহমেদ হুসেইন। সদস্য সচিব শহিদুল হক দেওয়ানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন।