ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ প্যানেলের বিজয়কে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অচিন্তনীয় এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বার্তায় শিবিরকে অভিনন্দন জানালেও কিছু সময় পর সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা প্রশ্ন উঠেছে।
পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে শিবিরের বিজয়ে অভিনন্দন জানায়। অভিনন্দনবার্তায় বলা হয়,
“বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পুরো প্যানেলে বিজয় অর্জন করায় ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। এই সাফল্য বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে ছাত্র-যুবকদের ভূমিকাকে নতুন মাত্রা দেবে এবং ভারতীয় প্রভাব থেকে মুক্তির পথে সহায়ক হবে।”
এ ছাড়া পাকিস্তান জামায়াতের আমির নাইম উর রহমান ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও শিবিরকে অভিনন্দন জানান। সেখানে তিনি লেখেন,
“বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির পূর্ণ প্যানেলে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘটল।”
তবে কিছু সময় পর তিনিও তার পোস্ট মুছে ফেলেন।
এ ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী প্রকাশিত বার্তাটি মুছে ফেলল, সেটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কেউ কেউ মনে করছেন, রাজনৈতিক কূটনৈতিক চাপের কারণে বার্তাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আবার অনেকে বলছেন, পাকিস্তান জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ জামায়াতের সঙ্গে অঘোষিত যোগাযোগ বজায় রাখলেও প্রকাশ্যে সেটি অস্বীকার করে এসেছে। তাই হঠাৎ প্রকাশিত অভিনন্দনবার্তাটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তারা পোস্ট ডিলিট করে।
মুছে ফেলা বার্তায় পাকিস্তান জামায়াত আরও দাবি করেছিল, শিবিরের এই বিজয় শুধু ছাত্রসমাজের নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার প্রতীক হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকারও প্রশংসা করে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সরকার নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশে এ ঘটনা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো বিদেশি রাজনৈতিক দলের এমন প্রকাশ্য বার্তা এবং পরবর্তীতে হঠাৎ প্রত্যাহার কূটনৈতিকভাবে অস্বাভাবিক। এর ফলে পাকিস্তান জামায়াত ও বাংলাদেশ জামায়াতের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হলো।
এদিকে শিবিরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ডাকসুর নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পূর্ণ প্যানেলের জয় এবং পাকিস্তান জামায়াতের অভিনন্দন ও পরবর্তী পোস্ট প্রত্যাহারের ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।