বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী ফজলুর রহমান দাবি করেছেন, দেশ–বিদেশ থেকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র’ তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ফজলুর রহমান বলেন, “আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার সেগুনবাগিচার ভাড়া বাসার সামনে ওরা অবস্থান নিয়েছে। তারা স্লোগান দিচ্ছে— ফজলু পাগলাকে গ্রেপ্তার করো, হত্যা করো। আজ আপনাদের মাধ্যমে আমি সারা জাতিকে জানাতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে। মৃত্যুকে আমি ভয় করি না, কিন্তু অপমৃত্যু আমার কাছে লজ্জাজনক।”
সম্প্রতি জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে ফজলুর রহমানকে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের নিজ এলাকায় এবং ঢাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার কুশপুত্তলিকায় আগুন দেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নেতার্কমীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে এসে ফজলুর রহমান বলেন, “আমার যে এলাকা— ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামের মানুষের কাল থেকে বোধহয় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। যেটা আমার নির্বাচনী এলাকা (কিশোরগঞ্জ-৪) সেখানের মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আমি দেশের একজন মানুষ; সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুযায়ী, এ দেশে আমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, “দেশ–বিদেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, বিশেষ করে কিছু ইউটিউবার, আমাকে হত্যার জন্য উস্কানি দিচ্ছে। একজন এমনকি প্রকাশ্যে বলেছে, ফজলু পাগলাকে জবাই করতে হবে।” তবে তিনি পরিষ্কার করে বলেন, “আমি মেরে ফেললেও কোনো জিডি বা মামলা করব না। ছাত্ররা যদি মনে করে আমি অপরাধ করেছি, তারা মামলা করুক, আদালত বিচার করুক। কিন্তু মব সৃষ্টি করে হত্যার হুমকি দেওয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ নয়।”
এ সময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, “আমার বাসার সামনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।” সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম রেখা ও ছেলে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে বিএনপির কয়েক শ নেতা–কর্মী মিছিল ও সমাবেশ করেন। উপজেলা সদরের খেলার মাঠ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তিযোদ্ধা ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক বলেন, “যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা আমাদের নেতাকে রক্ষা করব। ফজলুর রহমান সবসময় দলের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন।” বক্তারা তাকে একজন সৎ, নির্ভীক ও আদর্শবান রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জামায়াত ও এনসিপির একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র করছে।
সমাবেশ শেষে ফজলুর রহমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।