ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণাকে ঘিরে বিএনপি দুই রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিকেলে তীব্র সমালোচনা, আর রাতে সংবাদ সম্মেলনে কৃতজ্ঞতা। বৃহস্পতিবারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বৈপরীত্য এখন দেশের আলোচনার কেন্দ্রে।
বিকেলে সালাহউদ্দিনের কড়া প্রতিক্রিয়া
দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের প্রক্রিয়া ঘোষণা করেন। এর পরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ তোলেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ “লঙ্ঘন” করেছেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ নতুন ধারণা। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এটি ছিল না। আজকের সিদ্ধান্ত জুলাই সনদের কাঠামো ভেঙে দিয়েছে।”
তার এই বক্তব্য দ্রুতই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দেয় এবং বিএনপির অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ায়।
রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকঃ স্বরে নাটকীয় পরিবর্তন
তবে সন্ধ্যায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। তিন ঘণ্টার আলোচনার পর রাত ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তবে এবার সম্পূর্ণ বিপরীত সুরে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন এবং একই দিনে গণভোটের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করায় বিএনপি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।”
তিনি জানান, বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী একই দিনে গণভোট আয়োজনের পক্ষে ছিল, তাই সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দিনব্যাপী নাটকীয় ওঠানামা
এদিনের আগেই তেজগাঁওয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদিত হয় এবং পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাতে সই করেন। এর ঘণ্টাখানেক পর ড. ইউনূস ভাষণে গণভোটের সময়সূচি ও পরবর্তী সংবিধান সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট পেলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ, যারা ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধনী সম্পন্ন করবে। এরপর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন হবে।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও বিএনপি’র দ্বৈত বার্তা
দিনের প্রথমার্ধে বিএনপির কড়া সমালোচনা এবং কয়েক ঘণ্টা পর ধন্যবাদ এই দুই অবস্থান রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এখনো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি।
অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক আট দল নভেম্বরেই গণভোটের দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।