ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভরাডুবির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা এই সংগঠনকে ঘিরে জয় প্রত্যাশা থাকলেও বিভক্তি, বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাংগঠনিক দুর্বলতায় শেষ পর্যন্ত একটি পদেও জয়ী হতে পারেনি তারা। এতে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাগছাসের শক্ত অবস্থান রয়েছে—এমন ধারণা থেকেই অনেকে ভেবেছিলেন, ডাকসুতে সহজ জয় আসবে। এতে এনসিপি তরুণ ভোটারদের কাছে রাজনৈতিক সমর্থন প্রমাণ করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো ফল হয়েছে। এনসিপির ভেতরেই অনেকে মনে করছেন, বাগছাস নেতারা তাদের নির্বাচনী কৌশলে যুক্ত করেননি, বরং নিজস্ব সিদ্ধান্তে প্যানেল গড়েছেন। প্রায় প্রতিটি পদে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানো ঠেকাতেও ব্যর্থ হয়েছেন।
নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির একচেটিয়া বিজয় অর্জন করেছে। সহসভাপতি (ভিপি) পদে শিবিরের সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, বিপরীতে বাগছাস প্রার্থী আবদুল কাদের পান মাত্র এক হাজার ১০৩ ভোট। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে শিবিরের এস এম ফরহাদ পান ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট, বাগছাস আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার পান দুই হাজার ১৩১ ভোট। সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে শিবিরের মুহা. মহিউদ্দিন খান পান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট, বাগছাস মুখপাত্র আশরেফা খাতুন মাত্র ৯০০ ভোটে ষষ্ঠ হন।
অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে ভোট প্রচারে কর্মী-সমর্থক ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ভিপি পদে স্বতন্ত্র হয়ে দাঁড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, তিনি তিন হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে পঞ্চম হন। জিএস পদে বাগছাস কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসীর পান তিন হাজার আট ভোটে তৃতীয় স্থান। সংগঠনের আরও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আশিকুর রহমান জীম, আবু সালেহীন অয়ন, সানজানা আফিফা অদিতিসহ অনেকে প্যানেলের বাইরে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন।
এদিকে ক্যাম্পাস সূত্র থেকে জানা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। এই ভরাডুবির নেপথ্য কারণ বাগছাসের শিবির নির্ভরতা। আন্দোলনের সময় বাগছাসের পেছনে মূল চালিকা শক্তি ছিল শিবিরের জনবল সহায়তা, কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই সমর্থন তারা হারায়। আন্দোলনের গতিপথও শিবির পরিচালিত ছিল ফলে বাগছাস বা এনসিপি নেতাদের 'নায়ক' হয়ে উঠাটা আসলে শিবিরেরই অবদান। ফলে বাগছাসের সমর্থন বা জনপ্রিয়তা বলতে যেটা ধরে নেয়া হয়েছিল, সেটা মূলত শিবিরের জনপ্রিয়তা এবং নির্বাচনী মাঠে যখন দুটো দলের ব্যানার আলাদা হয়ে যায় তখন বাগছাসের অগ্রহণযোগ্যতা উন্মোচিত হয়ে পড়েছে।
তবে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “বাগছাস নতুন সংগঠন। তাদের নেতাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বিভক্তি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্যানেলকে দুর্বল করে দিয়েছে।”
বাগছাস নেতৃত্ব যদিও দাবি করে তারা স্বাধীন সংগঠন, এনসিপির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে ডাকসু নির্বাচনে তাদের পরাজয় এনসিপির রাজনৈতিক সম্ভাবনাকেও বড় ধাক্কা দিয়েছে। প্রত্যাশিত মনোবল ও শক্তিমত্তা প্রমাণের সুযোগ হারিয়ে উল্টো দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে, যা জাতীয় রাজনীতিতেও এনসিপির অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।