ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে দাফন করা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নজরুলের পরিবারের সদস্যরা এই সিদ্ধান্তকে অনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও হাদির সমাধিকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে অস্থিরতার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে, ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মরদেহ সমাহিত করা হয়। শনিবার বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে একই স্থানে হাদির মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে শুক্রবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে ফ্রিজার ভ্যানে করে হাদির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আনা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, “শহিদ শরিফ ওসমান হাদি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন। দেশের জন্য তাঁর ত্যাগ আল্লাহ তাআলা কবুল করুন।”
তবে নজরুলের সমাধির আশপাশে যেখানে একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রথিতযশা শিক্ষকের কবর রয়েছে, সেখানে একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতাকে সমাধিস্থ করা কতটা যুক্তিসংগত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকেও এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে।
কবির পরিবারের সদস্য সোনালি কাজী ও স্বরূপ কাজী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ওই স্থানে খুব সীমিতসংখ্যক ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়। তাঁদের মতে, পর্যাপ্ত বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে দাফনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সোনালি কাজী বলেন, “নজরুল সম্প্রীতি ও মানবতার কথা বলে গেছেন। অথচ যার মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, তাকে কবির সমাধির পাশে দাফন করা হলো এটা আমাদের গভীরভাবে মর্মাহত করেছে।”
পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় কবির সমাধিও ভবিষ্যতে নিরাপদ থাকবে কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। তাঁরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক সরকারি ভবন, রাজনৈতিক কার্যালয়, সংবাদমাধ্যমের অফিস ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করা হয়।
নজরুলের পরিবার ও সংস্কৃতিকর্মীদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি দাফন নয়; এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক স্মৃতি ও প্রতীকের ওপর গভীর রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে।