নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দেশ-বিদেশের নানামুখী চাপের মাঝেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল দিকে মোড় নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ মামলার রায় ঘোষণা হবে ১৩ নভেম্বর। এ রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে চার দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির—১০ থেকে ১২ নভেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ এবং ১৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ লকডাউন।
দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রায়কে ঘিরে চলমান “প্রহসন, অবৈধ বিচার ও জনদমন নীতি”র বিরুদ্ধে জনগণকে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধে যুক্ত করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রায় জনগণ মানবে না” উল্লেখ করে তারা আইসিটি আদালত বন্ধ ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার নিয়ন্ত্রণ থাকবে আওয়ামী লীগের হাতে—জয় বাংলার হাতে। জনগণের ঘরে থাকা, শহর থামিয়ে দেওয়া, শান্তিপূর্ণ গণঅসহযোগই হবে লকডাউনের মূল শক্তি।” তিনি সতর্ক করেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যার ক্ষতি হলে সারাদেশ উত্তাল হবে।”
দলীয় সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার রায়কে ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রাজধানীর প্রবেশমুখ, শপিংমল, অফিস, কারখানা, পরিবহন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল করে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চার দিনের এ কর্মসূচিকে ‘অবৈধ, উস্কানিমূলক ও সহিংসতার পরিকল্পনা’ বলে দাবি করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাব, সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। রাজধানীকে নয়টি সেক্টরে ভাগ করে প্রায় ৬,৮০০ সদস্য মোতায়েনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন থানায় ‘রায়ট গিয়ার’, ওয়্যারলেস, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিশেষ মোবাইল টিম প্রস্তুত থাকবে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, সামাজিক মাধ্যমে ‘গুজব’ ছড়ানো হচ্ছে এবং দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি, চেকপোস্ট, হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানো হবে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, “যেকোনো ধরনের মিছিল বা জমায়েত পুলিশ প্রতিহত করবে। নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের পাওয়া মাত্র গ্রেপ্তার করা হবে।” সুপ্রিম কোর্ট নিরাপত্তা বিভাগও বিশেষ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। র্যাব বলছে, “এসব উড়ো খবর। দেশে কোনো অস্থিরতা তৈরি হতে দেওয়া হবে না।”
আওয়ামী লীগের মতে, বর্তমান সরকার “দমন-পীড়ন, গণহত্যা ও বিচারপ্রহসনের মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখাতে” চাইছে। তারা বলছে, দেশের মানুষ এখন রাজনৈতিক প্রতিশোধের বিচার নয়, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পেতে আন্দোলনে নেমেছে।
দলটির নেতাদের দাবি, ড. ইউনূস সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু ১৩ নভেম্বরের লকডাউন দেখাবে দেশ এখনও শেখ হাসিনার পক্ষে, এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ।