জাতীয় পার্টি (জাপা) নিষিদ্ধ করার দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম। দুই দলের শীর্ষ নেতারা একযোগে দাবি জানিয়েছেন, জাপা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি এবং বিদেশি স্বার্থের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, তাই দলটিকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, “নূরের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দা জানাই। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গণ-অধিকার পরিষদের দাবির সঙ্গে আমরাও একমত।”
তাহেরের এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে জামায়াত প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবির পক্ষে অবস্থান নিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত ও গণ-অধিকার পরিষদের অবস্থান এখন এক জায়গায় মিলেছে, যা জাতীয় পার্টির ওপর চাপ বাড়াবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।
অন্যদিকে একই দিন হেফাজতে ইসলাম এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টিকে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের চিহ্নিত এজেন্ট’ বলে আখ্যা দেয়। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “গণ-অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূরের ওপর জাপার সন্ত্রাসী, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কিছু ফ্যাসিস্ট সদস্যের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে জাতীয় পার্টিকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।”
হেফাজতের নেতারা আরও বলেন, ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষত পুলিশ সংস্কারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় বাহিনী এখনো “ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনী” হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যও ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের ভাবমর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা সতর্ক করে বলেন, “জাতীয় পার্টিকে ঘিরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের অপচেষ্টা সফল হতে দেয়া হবে না। ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ আখ্যা দিয়ে যারা বিতর্কিত করতে চাইছে, তারাই আধিপত্যবাদের দোসর।” তারা ছাত্র-জনতা, আলেম সমাজ ও মাদরাসাছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।
এর আগে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে জাতীয় পার্টি ও গণ-অধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর সেনা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে গুরুতর আহত হন নুরুল হক নূর। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই ঘটনার পর থেকেই জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে একাধিক জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জামায়াত ও হেফাজতের মতো ইসলামী দলগুলো যখন জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি তুলছে, তখন তা কেবল রাজনৈতিক চাপ নয়, বরং নতুন এক রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত। তবে অনেকে বিশ্লেষকই এটিকে জাপা নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরীতে সরকারেরই কৌশল হিসেবে দেখছেন।