বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের গঠিত ঐকমত্য কমিশনই দায়ী। তিনি বলেন, দীর্ঘ আট থেকে নয় মাস ধরে কমিশনে ব্যাপক আলোচনা হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার বিষয়ে বিএনপির আপত্তি উপেক্ষা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, সমঝোতা অর্জনের কথা বলা হলেও বাস্তবে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জেএসডির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় শুক্রবার তিনি এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সংকট সৃষ্টি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা একটি কমিশন গঠন করে বারবার ঐকমত্যের কথা বলছে। কিন্তু বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা একমত হইনি, তবু নোট অব ডিসেন্ট রাখার সুযোগও দেওয়া হয়নি। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
মির্জা ফখরুল জানান, জুলাই সনদে যে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি ছিল এবং তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। তার ভাষায়, “স্বাক্ষরিত সনদ আর বাস্তবায়ন—দুটির মধ্যে আকাশ–পাতাল পার্থক্য। নোট অব ডিসেন্ট না রেখে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি অসাংবিধানিক এবং উদ্দেশ্যমূলক বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে; এখন আবার নির্বাচন ঠেকাতে নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।
তবে সব অভিযোগের মধ্যেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে স্পষ্ট ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচনে যাব। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংস্কারের সব বিষয় তুলে ধরা হবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় এবং সরকার গঠনের সুযোগ পাই, তবে ঐকমত্য কমিশনে যেসব সংস্কার নিয়ে মতভেদ ছিল, আমরা সেগুলো সংসদে পাস করিয়ে বাস্তবায়ন করব।”
বিএনপি মহাসচিব তাদের বিরোধীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচনের বিরোধিতা না করে জনগণের রায়ে বিশ্বাস রাখুন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য জনগণ বুঝে ফেলেছে।”
আলোচনাসভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ জোটভুক্ত দলগুলোর নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, ন্যায্য নির্বাচন ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র কার্যকর হতে পারে না।