বহুধা বিভক্ত জাতীয় পার্টিকে কেন্দ্র করে পর্দার আড়ালে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক খেলা। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া দলটি এরই মধ্যে কয়েক দলে বিভক্ত হয়েছে। সর্বশেষ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন একটি অংশ আত্মপ্রকাশ করায় বিভাজন আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বর্তমানে মূলধারা বা অফিসিয়াল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের ভাই জিএম কাদের। অন্যদিকে পৃথক দুটি অংশের নেতৃত্বে আছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। সবচেয়ে অনিশ্চিত অবস্থানে রয়েছেন রওশন এরশাদ। পারিবারিক দ্বন্দ্বে জিএম কাদেরের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়লেও কোন অংশে তিনি আছেন তা স্পষ্ট নয়। রওশনপন্থীদের সাধারণ সম্পাদক কাজী মামুনুর রশীদ বর্তমানে কারাগারে, এবং তাঁরা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নতুন জোটে যোগও দেননি।

জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে ঘিরে এখন সবচেয়ে বড় উত্তাপ তৈরি হয়েছে দলটির ঐতিহ্যবাহী প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে। নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীকের মালিকানা বর্তমানে জিএম কাদেরের হাতে। তবে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই প্রতীকের অংশীদার হতে চান এবং বিভিন্ন মহলে লবিং শুরু করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁর অংশই ‘মূল দল’।
দলীয় ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আনিসুল মাহমুদ কোনও প্রভাবশালী মহলের আশ্বাস পেয়েছেন। তাই তিনি সমর্থকদের আশ্বস্ত করছেন, “আমাকে না দিলে লাঙ্গল কেউই পাবে না।” এতে বোঝা যাচ্ছে, প্রতীকের লড়াইকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের সমীকরণ তৈরি হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লাঙ্গল প্রতীককে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই টানাপোড়েন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং আসন্ন নির্বাচনে কার লাভ-কার ক্ষতি হবে তা চিন্তা করেই খেলাটি সাজানো হচ্ছে। জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব ও নেতৃত্ব প্রশ্নে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করার পাশাপাশি এই প্রতীকের নিয়ন্ত্রণ এখন ক্ষমতার বড় পরীক্ষায় রূপ নিয়েছে।