এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ কমছে না। দলীয় নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সবখানে জল্পনা এখন একটাই: মেডিক্যাল বোর্ড কোন সিদ্ধান্ত নেয়। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারছেন। বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, তা যুক্তরাজ্য থেকে আগত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শসহ বোর্ডের সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে।
হাসপাতালে সেনাপ্রধান-নৌবাহিনী প্রধানের আগমন ও বাড়তি নিরাপত্তা
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এর পরপরই হাসপাতাল চত্বরে নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়।
এরই মধ্যে রাষ্ট্র খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) হিসেবে ঘোষণা করে এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) নিরাপত্তা প্রদান শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই হাসপাতালের ভেতর-বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত যাচাই ছাড়া কাউকে হাসপাতালে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
দলীয় ভিড় কমলেও বাড়ছে অযাচিত উপস্থিতি ও বিতর্ক
২৩ নভেম্বর ভর্তি হওয়ার পর প্রতিদিন বিএনপির বিপুল নেতাকর্মীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় দলীয় নেতাদের। পরে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় ভিড় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে মঙ্গলবার দেখা যায়, ভিড় না থাকলেও কিছু ব্যক্তির অযাচিত উপস্থিতি রয়েছে। কেউ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে অপ্রাসঙ্গিক আচরণ করছে, কেউ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছে যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভিভিআইপি মর্যাদা রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করছে
খালেদা জিয়াকে হুট করে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে এসএসএফের নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন প্রশ্নও উঠেছে। সমালোচকদের মতে, একজন রাজনৈতিক দলের প্রধান ও আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীকে ভিভিআইপি মর্যাদা দেওয়ায় “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যদি পরিবার পর্যন্ত এই নিরাপত্তা বর্ধিত হয়, যেমন তারেক রহমান দেশে এলে একই সুবিধা পান, তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও একই নিরাপত্তা দাবি করতে পারেন। তাছাড়া সরকারের এই সিদ্ধান্ত বৈষম্য সৃষ্টি করবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
একজন মনোনীত প্রার্থীকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচনী ন্যায়সংগততার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে সম্মান দেওয়া স্বাভাবিক হলেও, তিনি যেহেতু এখনো সক্রিয় রাজনীতির অংশ এবং তিনটি আসনে মনোনীত প্রার্থী তাই অতিরিক্ত সুবিধা রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করতে পারে।
রাজনৈতিক পরিবেশে বাড়ছে চাপ
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে নিরপেক্ষ রীতিনীতির মধ্যে থাকার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা নতুন প্রশ্ন ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
দেশজুড়ে এখন চিকিৎসা ও রাজনীতি দুই দিক থেকেই নজর এভারকেয়ার হাসপাতালের দিকে।