টাঙ্গাইল শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি এবং নিজ বাড়িতে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “যেদিন আমরা রাস্তায় নামব, সেদিন লাঠি না বন্দুকও কিছু করতে পারবে না।”
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে কবি নজরুল সরণিতে নিজের বাসভবনের সামনে জরুরি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে রোববার মধ্যরাতে বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধার বাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি অবাক হয়েছি মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়। মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হবে, আর সেটা নিষিদ্ধ করা হলো। এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।” তিনি আরও বলেন, “আমার মরার কোনো ভয় নেই। আমি চাই দেশের শৃঙ্খলা থাকুক। যে আশা নিয়ে যৌবনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই আশা আজ ধূলিসাৎ হতে চলেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, বাসায় হামলা প্রমাণ করে দেশে কারও নিরাপত্তা নেই। তার ভাষায়, “আমার বাসায় আক্রমণ করা সম্ভব হলে এদেশের যেকোনো মানুষের বাড়িতে হামলা সম্ভব। দেশে আইনশৃঙ্খলা নেই।”
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “শেখ হাসিনার পতন মানে মুক্তিযুদ্ধের পতন নয়, বঙ্গবন্ধুর পতন নয়, স্বাধীনতার পতনও নয়। এগুলোকে এক করে দেখা অন্যায়।” তিনি যোগ করেন, “আমার বাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে যদি দেশে শান্তি আসে, আমি তাতেই রাজি। এখন আমার বয়স ৮০, প্রয়োজনে চলে যেতে পারলেই খুশি হবো।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেসব শক্তি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিল তারা যদি ব্যর্থ হয়, তবে ভবিষ্যতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণ আর এগিয়ে আসবে না।
সোমবারের সমাবেশে কাদের সিদ্দিকীর পাশাপাশি যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল, বীর প্রতীক ফজলুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সখিপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সজীব এবং বাসাইল উপজেলা শাখার সভাপতি রাহাত হাসান টিপু বক্তব্য দেন।
এর আগে রোববার বিকালে বাসাইল উপজেলায় কাদেরিয়া বাহিনী ও ছাত্র সমাজের সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রশাসন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে। ওই সময় প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিনভর তৎপর ছিল। শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই সমাবেশে যায়নি।
কাদের সিদ্দিকীর বাসভবনে সোমবারের সমাবেশে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় না নেমে বাসার নিচতলায় অবস্থান নেন।