সর্বশেষ

বিদেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের বাড়তি জেরা ও বিড়ম্বনা, উদ্বেগ বাড়ছে

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১৮
বিদেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের বাড়তি জেরা ও বিড়ম্বনা, উদ্বেগ বাড়ছে
বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বাড়ছে জটিলতা

বিদেশ ভ্রমণে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বাড়ছে জটিলতা ও হয়রানি। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইমিগ্রেশনে জেরার মুখে পড়ছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা—এমন কি সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও।

 

গত জুনে কলম্বো বিমানবন্দরে সাইফুর রহমানসহ পাঁচ বাংলাদেশিকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করে শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ভিসার অপব্যবহার করছেন—এটাই বাড়তি জেরার কারণ।

 

জনপ্রিয় ট্রাভেল ব্লগার নাদির নিবরাস সেশেলসে ভ্রমণের সময় এক ঘণ্টার বেশি সময় আটকে ছিলেন। তার স্প্যানিশ বন্ধু, যিনি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পাসপোর্টধারী, তিনিও জেরার মুখে পড়েন—শুধু নাদিরের সঙ্গে থাকার কারণে। ব্যাংক ব্যালেন্স, অতিরিক্ত টিকিট, হোটেল বুকিং সবকিছু প্রমাণ করতে বাধ্য হন তারা।

 

ট্রাভেল ব্লগার শিশির দেব জানান, সাধারণ বাংলাদেশিদের বারবার পাসপোর্ট ও ভিসা চেক করা হয়। যদিও ইউটিউবার পরিচয়ে তিনি কিছুটা ছাড় পেয়েছেন, কিন্তু তার সঙ্গেই থাকা অন্য বাংলাদেশিদের হয়রানি হতে দেখেছেন।

 

মালয়েশিয়ায় ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রবেশে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে সরকার। গত ৩০ আগস্ট ১০৪ জন বিদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়, যার মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি। এর আগে ১৫ আগস্ট ২০৪ জন বাংলাদেশিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

 

থাইল্যান্ডের দূতাবাস সতর্ক করেছে, জাল কাগজপত্র দিয়ে ভিসা আবেদন করলে তা বাতিল হবে। দেশটির ইমিগ্রেশন থেকেও বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইনে অন অ্যারাইভাল ভিসা থাকলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুবাই প্রবাসী ফারুক জানান, হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট, ক্যাশ সবকিছু দেখানোর পরও তাকে তিনবার জেরা করা হয়। মিসরেও অন অ্যারাইভাল ভিসার শর্ত কঠোর হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার বৈধ ভিসা, ফিরতি টিকিট, ৫ হাজার ডলার ব্যাংক ব্যালেন্স, এবং রেসিডেন্ট কার্ডের মেয়াদসহ একাধিক শর্ত পূরণ করতে হয়।

 

একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, “বাংলাদেশিদের অনেকেই ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফেরেন না, কিংবা তৃতীয় দেশে চলে যান। এতে ভিসা প্রদানকারী দেশের ক্ষতি হয়।”

 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমাদের ঘর গোছাতে হবে। আমরা যা তৈরি করবো, সেটাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিক্রি করতে পারবে।” তিনি নিজেও পাসপোর্ট নিয়ে জেরার মুখে পড়েছেন বলে জানান।

 

ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান—সব জায়গায় বাংলাদেশিদের অতিরিক্ত অবস্থানের অভিযোগে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে ভিসানীতি শিথিল করা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক আস্থার ওপর। বাংলাদেশি পাসপোর্টের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা, দায়িত্বশীল আচরণ এবং রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ।

সব খবর