বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পর্কিত বকেয়া অর্থপ্রদানের জটিলতা সমাধানে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে ভারতের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। সোমবার রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, পাওয়ার সাপ্লাই চুক্তির কয়েকটি খরচ উপাদান ও বিলিং গণনা নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে আলোচনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গড়িয়েছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে আদানি পাওয়ার। বর্তমানে এই প্ল্যান্ট বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে। তবে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ, কর সুবিধা এবং বিলিং গণনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ রয়েছে।
আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র বলেন, “গণনা ও বিলিংয়ের কয়েকটি উপাদানে দুই পক্ষের ভিন্ন মত রয়েছে। তাই উভয় পক্ষই সালিশি প্রক্রিয়ায় সম্মত হয়েছে। আমাদের আশা, দ্রুত, সহজ ও পারস্পরিক উপকারী সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে জানান, এখনো দুই পক্ষের আলোচনা বন্ধ হয়নি। তিনি বলেন, “আলোচনায় সমাধান না মিললে আন্তর্জাতিক সালিশের বিকল্প আমরা বিবেচনা করব।”
গত বছর আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, গোড্ডা প্ল্যান্টের জন্য ভারত সরকার প্রাপ্ত কর সুবিধা স্থগিত রেখে তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ তুলনামূলক বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারকে প্রতি ইউনিট ১৪.৮৭ টাকা হারে পেমেন্ট করেছে, যেখানে অন্যান্য ভারতীয় উৎস থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৯.৫৭ টাকা।
তবে আদানি পাওয়ার দাবি করছে, বাংলাদেশের বকেয়া পাওনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। মে মাসে যেখানে বকেয়া ছিল প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার, বছরের শুরুতে যা দুই বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছিল, এখন তা কমে ১৫ দিনের পাওনা সমপরিমাণে এসে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটির ভাষ্য, তারা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে এবং বাংলাদেশকে নির্ভরযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে সহায়তা করতে চায়।
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের জন্য এ বিরোধ কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার ঘটনা দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর চাপ তৈরি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।