সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেশে আনা হচ্ছে। দেশে পৌঁছানোর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তাদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর চালানো ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন এবং আরও আটজন আহত হন। আহতদের সবাইকে চিকিৎসার জন্য কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে হাসপাতাল ছেড়েছেন, বাকিরাও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার বাসিন্দা লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
আহত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান, সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন, করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি, ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলামসহ আরও চারজন সৈনিক। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও রয়েছেন, যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সক্রিয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভূমিকার আরেকটি দৃষ্টান্ত।
শহীদ শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক গৌরবোজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ১০টির বেশি দেশে শান্তিরক্ষী মোতায়েন রেখেছে এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৯টি দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে।
এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আহত হয়েছেন ২৭২ জন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যদের সম্মিলিত অবদানে বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের অন্যতম নির্ভরযোগ্য শান্তিরক্ষা অংশীদার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
শনিবার স্বদেশে ফিরছে সেই ছয় বীরের নিথর দেহ যারা অস্ত্র হাতে নয়, শান্তির পতাকা হাতে নিয়ে মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন।