ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট সংলগ্ন আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এছাড়া সহায়তায় যোগ দিয়েছে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির দুই প্লাটুন। ঘটনাস্থলে এক হাজারেরও বেশি আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান জানিয়েছেন, আগুন নেভাতে গিয়ে তাদের ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আটজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ও বাকি সাতজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “দুপুরে খবর পাওয়ার পর প্রথমে চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে পর্যায়ক্রমে আরও ইউনিট যোগ দিলে মোট ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।”
প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার সময় কার্গো ভিলেজের উত্তর পাশের দ্বিতীয় তলায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল।
বেবিচকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ কাউছার মাহমুদ বিকেল ৫টার দিকে এক বিবৃতিতে জানান, “সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।”
আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর দুটি করে ফায়ার ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মীদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও অগ্নি নির্বাপণে সহায়তা দিচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকাগামী অন্তত ১২টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরে কর্মরত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “আগুন লাগার পরপরই দুর্ঘটনা এড়াতে হ্যাঙ্গারে থাকা কয়েকটি বিমান নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়।”
ঘটনাস্থলে এখনো ঘন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকেও ধোঁয়া দৃশ্যমান হয়। বিমানবাহিনী মাইকিং করে উৎসুক জনতাকে সরে যেতে বলছে।
বিমানবন্দরের প্রবেশপথ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে উত্তরা, বিমানবন্দর ও খিলক্ষেত এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে বেবিচক বলেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনী একযোগে কাজ করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।