মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার বীর উত্তম আর নেই। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৬ বছর।
বিজয়ের মাসে দেশের এই বীর সন্তানের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে আসে সর্বস্তরে। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক—দৃঢ়চেতা, সাহসী ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক।
রোববার দুপুর আড়াইটায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অবস্থিত বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এ কে খন্দকারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে তাঁর ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, তিন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে সামরিক সচিব কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে বিমানবাহিনীর একটি ফ্লাইপাস্টের মাধ্যমে তাঁকে শেষ সম্মান জানানো হয়।

১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি রংপুরে জন্ম নেওয়া এ কে খন্দকারের পৈত্রিক নিবাস পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে থাকা অবস্থায় পাকিস্তান বিমানবাহিনী ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম প্রধান নিযুক্ত হন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাহিনী পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ সালে তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। সামরিক জীবনের পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রদূত, পরিকল্পনামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ ইতিহাসচর্চায় আলোচিত হলেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ভুল তথ্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ কে খন্দকারের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সামরিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান হলো।