সর্বশেষ

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের কনটিনজেন্ট প্রত্যাহারের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২:০৫
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের কনটিনজেন্ট প্রত্যাহারের নির্দেশ

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের পুলিশের একমাত্র অবশিষ্ট কনটিনজেন্টকে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি) থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৮০ সদস্যের এই কনটিনজেন্ট, যার মধ্যে ৭৫ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন। জাতিসংঘের তহবিল সংকট এবং জনবল পুনর্গঠনের নীতির কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

জাতিসংঘের এক অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ক্যামেরুন, সেনেগাল ও মিশরসহ কয়েকটি দেশের কনটিনজেন্টের সদস্যসংখ্যাও আংশিকভাবে কমানো হচ্ছে। তবে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যাদের পুরো পুলিশ ইউনিটকেই প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইউএন–অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। বাজেট ঘাটতির কারণে এই কনটিনজেন্ট ফেরত আসছে। বাজেট সংকট দূর হলে ভবিষ্যতে হয়তো আবার নতুন কনটিনজেন্ট পাঠানোর সুযোগ তৈরি হবে।”

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২৬ আগস্ট কঙ্গোতে পৌঁছে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করেছিল বাংলাদেশের এই এফপিইউ ইউনিট। বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, এবং নভেম্বরের মধ্যভাগের মধ্যেই তারা পুরোপুরি দেশে ফিরে আসবেন।

 

২০০৫ সাল থেকে কঙ্গোতে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশের নারী এফপিইউ ইউনিট। চলতি বছরের আগস্টেই এই ইউনিটের সর্বশেষ দলটি মোতায়েন করা হয়। মাত্র দুই মাস আগেই জাতিসংঘের কঙ্গো বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি তাদের মেডেল প্যারেডে উপস্থিত থেকে প্রশংসা করেছিলেন যা ছিল ইউনিটটির প্রতি জাতিসংঘের আস্থার প্রতীক।

 

তবে বাংলাদেশ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের ইউনিট শান্তিরক্ষা মিশনে সম্মান ও গৌরব বয়ে এনেছে। সরকারের কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগের অভাবে যদি এটি বন্ধ হয়ে যায়, তা হবে বড় আঘাত।”

 

এক নারী কর্মকর্তা বলেন, “নারী পুলিশ ইউনিট শুধু পুলিশের নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় গৌরব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণের প্রতীক হিসেবে এটি বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারের উচিত এখনই জাতিসংঘের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে আলোচনায় যাওয়া।”

 

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তহবিল অনিশ্চয়তার কারণে জাতিসংঘ আগামী কয়েক মাসে নয়টি মিশন থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ শান্তিরক্ষী কমানোর পরিকল্পনা করেছে। এতে ১৩ থেকে ১৪ হাজার সৈন্য, পুলিশ ও বেসামরিক কর্মী প্রভাবিত হবেন।

 

বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দাতা দেশ, যা মোট বাজেটের প্রায় ২৬ শতাংশ প্রদান করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন, যারা প্রায় ২৪ শতাংশ তহবিল যোগান দেয়।

 

১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। এর পর থেকে তারা ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছে। ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত বাংলাদেশের ২১ হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তা জাতিসংঘ মিশনে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকায় কিছুসংখ্যক আইপিও সদস্য শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

জাতিসংঘের এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করল যেখানে বাজেট সংকট ও কূটনৈতিক বাস্তবতা মিলে দীর্ঘদিনের গৌরবময় ঐতিহ্যে ছায়া ফেলেছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

ঈদের দিনে অর্ধশত শহীদ ফটিকছড়িতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা

জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

নেই কোনও স্মৃতিচিহ্ন জন্মস্থানে অবহেলিত কিংবদন্তি বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বী

বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলো বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক কৌশল বদলেছিল ওয়াশিংটন

কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

‘দেশ স্বাধীন করার শাস্তি’ কারাগারে দ্বিতীয় বিজয় দিবস কাটাবেন একাত্তরের বিজয়ের কারিগরেরা

আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা আজ ৫৫তম মহান বিজয় দিবস

রায়েরবাজারে জনসমাগম কম, তবু উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রায়েরবাজারে জনসমাগম কম, তবু উচ্চারিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার

প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি

প্রণয় ভার্মাকে তলবের পর ঢাকার উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করল নয়াদিল্লি

পরাজয় যতই স্পষ্ট, বুদ্ধিজীবী অপহরণের মাত্রা বাড়তে লাগল

একাত্তরের এই দিন | ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ পরাজয় যতই স্পষ্ট, বুদ্ধিজীবী অপহরণের মাত্রা বাড়তে লাগল