দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনতে ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১ হাজার ২২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ৬৭০ কোটি ৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এটি চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তৃতীয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪তম একনেক সভা।
২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবার অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক সভাশেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন হবে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
এরই মধ্যে চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর, রোববার গণমাধ্যমে খবর আসে, বাংলাদেশে ক্রীড়ার প্রসার, উন্নয়ন ও মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর দেশের ৬৪ জেলায় বাস্তবায়ন হয় বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি প্রকল্প। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্রীড়া পরিদপ্তর এ প্রকল্পের দায়িত্বে। পরিকল্পনায় বলা হয়, তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেছে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক দল তৈরি করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এ প্রকল্প শুধু কাগজেই থেকে গেছে। মাঠে কার্যক্রম নেই, বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। অভিযোগ আছে, ১০০ ভাগ টাকাই আত্মসাৎ হচ্ছে বছরের পর বছর।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রতিটি জেলায় এ প্রকল্পে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভাগীয় আটটি জেলায় বরাদ্দ ছিল আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে। কিন্তু এক টাকাও প্রকৃত অর্থে খরচ হয়নি বলে তদন্তে ধরা পড়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও টাকাগুলো ভাগ করে নেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। ক্রীড়া পরিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আ ন ম তরিকুল ইসলাম নিজস্ব উদ্যোগে তদন্ত চালান। তার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো অর্থ ব্যয় হয় না। কার্যক্রম কাগজে দেখানো হয়, মাঠে নয়। বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন জেলা ক্রীড়া অফিসাররা।
এদিকে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর, বুধবার পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪তম একনেকের সভায় ৮ হাজার ৩৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারীর ক্ষমতায়নমূলক ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধন; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০০ হর্সপাওয়ার রিগ ক্রয়, শাহবাজপুর ও ভোলা এলাকায় কূপ খনন এবং নেসকো এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন প্রকল্প।
এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপকূলীয় এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল ও যমুনা স্পেশালাইজড জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল মিল প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত তিনটি প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২), নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী ও স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প এবং গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পও আজকের সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
তবে, বর্তমান অন্তর্ববর্তী সরকারের প্রকল্প অনুমোদন এবং বাস্তবায়নে বিশাল ফারাক রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষক মহল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের বিভন্ন দুর্নীতি এবং প্রকল্কের টাকা তছরুফের খবর চাউর হয়েছে। দেশের অতি উচ্চ মহল থেকে শুরু করে নিম্নশ্রেনীর গণমানুষ পর্যন্ত এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যেমে উঠে এসওে অদৃশ্য কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
বিশ্লেষক মহল মনে করছেন, এতো এতা প্রকল্পের টাকা যদি বাস্তবায়নের জন্য জনবল নিয়োগ এবং অন্যান্য কেনাকাটায় ব্যবহার করা হতো, তাহলে দেশের সকল শ্রেণীর গণমানুষের হাতে টাকা থাকতো। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে দেশের নিম্নশ্রেনীর মানুষের মাথাপিছু আয় কমেছে। তাহলে এসব বাজেট অর্থের প্রবাহ কোথায়? সেটি নিয়েই প্রশ্ন দেশের জনগণের!