চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের ৩০ বছরের চুক্তি স্বচ্ছতার বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। জুলাই দাঙ্গার মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন এই সরকারের কাছে অনেকেরই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রত্যাশা থাকলেও, সমালোচকদের মতে এই চুক্তি সেই প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ–ডেনমার্ক প্রথম যৌথ প্ল্যাটফর্ম বৈঠকে এপিএম টার্মিনালসের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পরের বছর ছয় মাসের মাথায় টেন্ডার আহ্বান না করেই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনকে এই প্রকল্পের লেনদেন পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিযোগিতাবিহীন বেশ কিছু চুক্তি বাতিল করলেও লালদিয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেই নীতি অনুসরণ করা হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই তড়িঘড়ি করে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়। সমালোচকরা বলছেন, এই চুক্তি ‘সুইস চ্যালেঞ্জ’ পদ্ধতিতে করা হলে স্বচ্ছতা, প্রতিযোগিতা ও জনস্বার্থ আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত হতো। কিন্তু সরকার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিই বেছে নিয়েছে, যা আইনসিদ্ধ হলেও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অভিযোগ রয়েছে, মাত্র দুই সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রযুক্তিগত ও আর্থিক মূল্যায়ন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, সিসিইএ সভা এবং এলওএ প্রদানের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেছে যা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পরদিনই চুক্তি সই হয়, যেদিন দেশের নজর ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ে।
চুক্তির শর্তাবলি প্রকাশ না করাও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পিপিপি আইন ২০১৫-এর গোপনীয়তা ধারার অজুহাতে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা প্রাক-চুক্তি পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য এবং তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী অনেক তথ্য প্রকাশযোগ্য ছিল। চুক্তি সই হলে তা জনদলিল হিসেবেই গণ্য হয়, কিন্তু সরকার তা প্রকাশ করেনি।
সমালোচকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই গোপনীয়তা ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতসহ সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগ চুক্তি সই করা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন তোলে।
যদিও প্রকল্পটি দেশের বন্দর আধুনিকায়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তবে স্বচ্ছতার অভাবে তা নিয়ে অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে।