সর্বশেষ

অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আনু মুহাম্মদের অভিযোগ

সভা-সমাবেশ বন্ধ করে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:০০
সভা-সমাবেশ বন্ধ করে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায় সরকার

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিলে তা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি অভিযোগ করেছেন, সরকার বন্দরের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে জনগণের প্রতিবাদ বন্ধের চেষ্টা করছে, যেন এই এক মাসের মধ্যেই বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে গোপন চুক্তি সম্পন্ন করা যায়। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর জিয়া স্মৃতি যাদুঘর সেমিনার হলে “জাতীয় সক্ষমতা ও জাতীয় নিরাপত্তা: চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গ” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন।

 

আনু মুহাম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কৌশলের অন্যতম কেন্দ্র। এমন একটি জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া মানে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা। বন্দরকে অবশ্যই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে, অন্যথায় এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার জনগণের বিরোধিতা ও আলোচনার সুযোগ না দিয়েই দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে গোপন চুক্তি করার চেষ্টা করছে। সংবিধান সংস্কার কমিটি বিদেশের সঙ্গে যেকোনো বড় চুক্তির আগে জনগণের মতামত নেওয়ার সুপারিশ করেছে, কিন্তু সরকার নিজের গঠিত কমিশনের সেই সুপারিশও মানছে না। তার মতে, ডিপি ওয়ার্ল্ড কেবল একটি আরব কোম্পানি নয়, বাস্তবে এটি মার্কিন স্বার্থরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণে আমেরিকা এখন চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী। এমন অবস্থায় বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া মানে দেশের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানো।

 

 

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগর পুলিশ একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্দরের আশপাশে এক মাসের জন্য সব ধরনের সভা, মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আনু মুহাম্মদ মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা আসলে বন্দরের বিদেশি ইজারা চুক্তি সম্পন্নের পথ পরিষ্কার করার জন্যই দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরও অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার ভাষাতেই কথা বলছে। জনগণের প্রতিবাদ বন্ধ করেই সরকার এই এক মাসের মধ্যে বন্দর হস্তান্তরের চুক্তি সম্পন্ন করতে চাইছে। আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এ চক্রান্ত প্রতিহত করব।”

 

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তি নবায়ন না করে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রস্তাব দেয়, যেখানে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডের নাম আসে। আপাতত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য নৌবাহিনী পরিচালিত চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এনসিটির দায়িত্বে থাকলেও, সরকার যে স্থায়ীভাবে বিদেশি অপারেটর নিয়োগে আগ্রহী—তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।

 

সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার তার সাংবিধানিক এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে বন্দর ইজারার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “বন্দর ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিলে দেশ উন্নত হবে—এই প্রচারণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়, বিদেশি চাপের কাছে দায়বদ্ধ।” সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, “১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার আমলে চট্টগ্রাম বন্দর মার্কিন কোম্পানি এসএসএ-কে ১৯৮ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল, যা জনগণের আন্দোলনের মুখে বাতিল হয়। এখনো সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে।” শ্রমিক নেতা শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বন্দর কর্মচারীদের শোকজ, বরখাস্ত ও সমাবেশ নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে সরকার হাসিনা আমলের দমননীতিকেই পুনরুজ্জীবিত করছে।”

 

সভায় আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ফেরদৌস আরা রুমি, বন্দর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হালিমা খাতুন, প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক ও শ্রমিক নেতা রাহাতউল্লাহ জাহিদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের চট্টগ্রাম সংগঠক আসমা আক্তার।

সব খবর

আরও পড়ুন

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলে উদীচীর তীব্র প্রতিবাদ

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলে উদীচীর তীব্র প্রতিবাদ

কে চালাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি?

জাকার্তা পোস্টের বিশেষ প্রতিবেদন কে চালাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি?

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নতুন বাস্তবতা

শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের বিশেষ বিশ্লেষণ শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নতুন বাস্তবতা

২০৮ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র তিনটি: জনপ্রশাসন সংস্কার আটকে কোথায়?

সংস্কারের হাল-হকিকত ২০৮ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র তিনটি: জনপ্রশাসন সংস্কার আটকে কোথায়?

আজ জেলহত্যা দিবস

৩রা নভেম্বর আজ জেলহত্যা দিবস

বিশ্ববাজারে গমের দরপতন, দেশে উল্টো বাড়ছে আটার দাম

অতিরিক্ত দামে বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ বিশ্ববাজারে গমের দরপতন, দেশে উল্টো বাড়ছে আটার দাম

স্বাস্থ্য খাতে ৩৩ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র ৬টি

সংস্কারের হাল-হকিকত স্বাস্থ্য খাতে ৩৩ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র ৬টি

ডিসেম্বরে বাংলাদেশে খাদ্যসংকটে পড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, ঝুঁকিতে ১৬ লাখ শিশু

আইপিসি রিপোর্ট ডিসেম্বরে বাংলাদেশে খাদ্যসংকটে পড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, ঝুঁকিতে ১৬ লাখ শিশু