বাণিজ্য উপদেষ্টার হুঁশিয়ারি কোনো কাজে আসেনি ভোজ্যতেলের বাজারে। পরিশোধন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো নিজেদের নির্ধারিত বাড়তি দরে সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে। ফলে ভোক্তাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে রান্নার তেল।
গত বুধবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছিলেন, সরকারকে না জানিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে, যা আইনগতভাবে বৈধ নয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। এরপর বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, লিটারে ৯ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করতে হবে। আজ রোববারের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। তবে কোম্পানিগুলো সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে বাড়তি দরের তেল সরবরাহ করছে। এতে ক্রেতাদের পকেট থেকে লিটারে অতিরিক্ত ৯ টাকা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে।
শনিবার রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজারে দেখা গেছে, রূপচাঁদা, তীর, পুষ্টি, ফ্রেশসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল নতুন দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৬৫ টাকা দরে, এক লিটার ১৯৮ টাকা এবং দুই লিটার ৩৯৬ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এক লিটার ছিল ১৮৯ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৯২২ টাকা। তবে বাজারে নতুন করে আসা স্টারশিপ ব্র্যান্ডসহ দু-একটি কোম্পানির পুরোনো কম দরের তেলও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
খোলা ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা এবং পাম অয়েল ১৫২ থেকে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ নির্ধারিত দাম ছিল যথাক্রমে ১৬৯ ও ১৫০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. রায়হান বলেন, সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। সব কোম্পানির ডিলার তেল দিচ্ছে, তবে সবাই বাড়তি দরের তেলই সরবরাহ করছে।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ১০ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে, তাই স্থানীয় বাজারেও দাম বাড়াতে হবে। তাদের দাবি, সরকারকে অবহিত করেই আইন অনুযায়ী দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এখনও দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
কোম্পানিগুলোর যুক্তি হলো, অনুমতি না দিলেও আইন অনুযায়ী তারা দাম বাড়াতে পারে। ফলে ভোক্তাদের জন্য তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়ানো ভোক্তাদের জন্য অযৌক্তিক চাপ তৈরি করছে। সরকারের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করছে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সব মিলিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বাড়তি দরে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের প্রত্যাশা, আজকের বৈঠকে সরকার স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেবে এবং বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে।