বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণকে “স্লোগান দেওয়ার” অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ ও সমালোচনা উঠেছে। পরিবারের দাবি, ২২ বছর বয়সী সাইদ শেখ জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী; সে নিজের খাবার পর্যন্ত নিজে খেতে পারে না, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা তো দূরের কথা।
গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজারের পাশে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে সাইদও আছেন, যিনি পরিবার ও আইনজীবীদের ভাষ্যে একজন “বাকপ্রতিবন্ধী”। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা “রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান” দিয়েছেন এবং সমাবেশ আয়োজনের চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু সাইদের আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, “যে ছেলে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না, সে কীভাবে স্লোগান দেবে?” তিনি মনে করেন, এটি আইনের স্পষ্ট অপব্যবহার।
প্রথমে পুলিশ নিজেই আদালতে সাইদকে বাকপ্রতিবন্ধী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। কিন্তু পরে তদন্ত কর্মকর্তা মত বদলে জানান, সাইদ প্রকৃতপক্ষে “তোতলা বা অস্পষ্টভাষী”। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সাইদের প্রতিবন্ধকতা পরীক্ষা করে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।
এ ঘটনায় মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, প্রতিবন্ধী নাগরিকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলায় রাষ্ট্রযন্ত্রের এই ব্যবহার বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সংকটকেই ফুটিয়ে তোলে। একজন যিনি নিজের দৈনন্দিন কাজও করতে পারেন না, তাকে “রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী” বানানো অমানবিক।
নারায়ণগঞ্জের পাগলায় নানি ও মামার সঙ্গে থাকতেন সাইদ। মা সুমি বলেন, “ও হাত দিয়ে নিজে ভাত খেতে পারে না, দৌড়াতে গেলে পড়ে যায়। এখন জেলে কিছুই খায়নি। আমরা পুরো পরিবার দুশ্চিন্তায় আছি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেটার মুক্তি চাই।” মামা সুমনও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে ছেলে রাজনীতি বোঝেই না, সে কীভাবে মিছিল করবে?”
মানবাধিকারকর্মীদের মতে, এ ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে আইন ও রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহারের সাম্প্রতিক উদাহরণ। প্রতিবন্ধী একজন নাগরিককে এমন মামলায় জড়ানো শুধু অন্যায় নয়, বরং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদেরও লঙ্ঘন।
সাইদের পরিবার বলছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একজন প্রতিবন্ধীকে জেলে রেখে দেওয়া সভ্য সমাজে কল্পনাতীত।