সর্বশেষ

সারের ভর্তুকি নিয়ে কৃষক প্রতারিত, ডিজিটাল দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত কৃষি খাত

কৃষি ডেস্ক বিডি ভয়েস
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৫১
সারের ভর্তুকি নিয়ে কৃষক প্রতারিত, ডিজিটাল দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত কৃষি খাত

বাংলাদেশে কৃষি খাতে ডিজিটাল ভর্তুকি ব্যবস্থার নামে এক ভয়াবহ প্রতারণা চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি ভর্তুকি সুবিধা পেতে গিয়ে হাজার হাজার কৃষক প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে সারের ক্ষেত্রে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ‘ই-ইনপুট কার্ড’ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকদের তথ্য সংগ্রহ করে ভর্তুকি দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়ে উঠেছে দুর্নীতির নতুন প্ল্যাটফর্ম।

 

সম্প্রতি ইত্তেফাকের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কৃষকরা সারের ভর্তুকি পেতে গিয়ে স্থানীয় ‘সিন্ডিকেট’-এর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং জমির তথ্য সংগ্রহ করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ভুয়া নিবন্ধন করে ভর্তুকির টাকা আত্মসাৎ করছে। অনেক কৃষক অভিযোগ করেছেন, তারা নিজেরাই জানেন না তাদের নামে ভর্তুকি উঠেছে, অথচ সরকারি রেকর্ডে তা দেখানো হয়েছে।

 

একই সময়ে বিবিসি বাংলার আরেক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই ডিজিটাল প্রতারণা শুধু সারের ক্ষেত্রেই নয়, বরং কৃষি ঋণ, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য ভর্তুকি সুবিধার ক্ষেত্রেও বিস্তৃত। কৃষকদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ের কিছু কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে এই সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অনেক সময় কৃষকদের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ভিন্ন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করা হয়, যাতে তারা কোনো তথ্য না পান।

 

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা, যাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা কম এবং যারা সরাসরি কৃষি অফিসে গিয়ে সেবা নিতে পারেন না। অনেকেই জানিয়েছেন, তারা বারবার আবেদন করেও কোনো সাড়া পাননি, অথচ সরকারি তথ্যে তাদের নামে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বড় সিন্ডিকেট ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি। বরং স্থানীয়ভাবে কিছু নামমাত্র অভিযান চালিয়ে দায়সারা প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিজিটাল ভর্তুকি ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে উঠেছে দুর্নীতির নতুন রূপ। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে কৃষকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, যা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিকভাবেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।

 

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে নিচের কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে:
 

  • কৃষকদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য স্বাধীন অডিট কমিটি গঠনইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি অফিসে ডিজিটাল হেল্প ডেস্ক চালু
  • প্রতিটি ভর্তুকি লেনদেনের এসএমএস নিশ্চিত করাসিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ
  • কৃষকদের ডিজিটাল সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
     

বাংলাদেশের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণ। এই খাতকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হলে শুধু প্রযুক্তি নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা। ডিজিটাল ব্যবস্থার আড়ালে কৃষকদের শোষণ বন্ধ করতে না পারলে, ভর্তুকি নয়—প্রতারণাই হবে কৃষকের ভবিষ্যৎ।

সব খবর