জামায়াতে ইসলামীর নেতা সিরাজুল ইসলামের ‘জমিদারি’ মন্তব্য ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর রাত দুইটার দিকে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নেমে বিক্ষোভ করেন। গোলচত্বর, এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন—“চবি নিয়ে জমিদারি চলবে না”, “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না” এবং “সন্ত্রাসীদের দালাল হুঁশিয়ার”।
বিতর্কিত মন্তব্যটি আসে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায়। সেখানে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা এই এলাকার মালিক। জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।” তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করে, তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ। তিনি পরে সংঘর্ষ প্রসঙ্গে দাবি করেন, ভুল–বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে এবং প্রকৃত সন্ত্রাসীরা স্থানীয় নয়, বাইরে থেকে এসেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায় যখন ভিডিওটি শুক্রবার রাতে ভাইরাল হয়। রাতভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলতে থাকে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এ ধরনের বক্তব্য কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকেই অপমান করেনি, বরং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।
এদিকে আজ শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরও সিরাজুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে। শাখাটির প্রচার সম্পাদক মো. ইসহাক ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক ও অহংকারী ভাষায় দেওয়া ওই বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।” বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, সভায় উপস্থিত অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদও প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে পারেননি বলে সংগঠন দুঃখ প্রকাশ করছে।
তবে একই বিবৃতিতে ছাত্রশিবির অভিযোগ করে, হামলায় স্থানীয় ছাত্রদলের নেতারা সরাসরি জড়িত ছিলেন এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলের ক্যাডার হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহেল দাবি করেন, ছাত্রশিবির রাজনৈতিক স্বার্থে সংঘর্ষের দায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর চাপাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বরং দু’পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন।”
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এখন কেন্দ্রীভূত হয়েছে ‘জমিদারি’ মন্তব্যকে ঘিরে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।