রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থায় নৈরাজ্য চরমে পৌঁছেছে। সড়কে চলছে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস, অননুমোদিত আন্তজেলা পরিবহন, লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভারী যানবাহনের অবাধ চলাচল। ফলে যাত্রী নিরাপত্তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যেমন স্টাফ কোয়ার্টার থেকে মিরপুর, বনশ্রী থেকে মিরপুর, গুলিস্তান থেকে গাজীপুর চলছে অছিম, রবরব, ভিক্টর, তুরাগ, গাজীপুর পরিবহন, অনাবিল, আকাশ পরিবহনের মতো বহু বাস কোম্পানির ফিটনেসবিহীন গাড়ি। এসব বাসের অধিকাংশের রং উঠে গেছে, লুকিং গ্লাস নেই, জানালা ভাঙা, সিট ভাঙা, পাখা নষ্ট যাত্রীদের জন্য চরম দুর্ভোগ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, দেশে ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ রাস্তায় চলাচল করছে, যা সড়ক নিরাপত্তায় বড় হুমকি। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা এসব গাড়ি জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠাচ্ছে, বাস্তবে তা পর্যাপ্ত নয়।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, “চোখে দেখে ফিটনেস নির্ধারণ নয়, অটোমেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাড়ির কাঠামোগত ত্রুটি শনাক্ত করতে হবে। বর্তমান পদ্ধতি কার্যকর নয়, এটি যেন তামাশা।”
অন্যদিকে, রাত ১০টার আগে রাজধানীতে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও নিয়ম ভেঙে সন্ধ্যা থেকেই ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে। বিশেষ করে বালু-মাটি ও পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বেপরোয়া গতিতে সড়কে চলাচল করছে, যা দুর্ঘটনা ও যানজটের অন্যতম কারণ। বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় নিবন্ধিত ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি, যার বাইরে রয়েছে আরও বহু অনিবন্ধিত যান।
রাজধানীর সড়কে অননুমোদিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপটও বেড়েছে। লাইসেন্স ছাড়া এসব যানবাহন প্রধান সড়কে অবাধে চলাচল করছে, যা নগরবাসীর জন্য নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বড় হুমকি।
এছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলছে আন্তজেলা বাস, যেগুলোর অনুমোদন নেই। রামপুরা-কুড়িল, মিরপুর, পান্থপথ, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় স্টার লাইন, ইকোনো, আল বারাকা, হিমাচল, হামদান, সাদিয়া, সোহাগ পরিবহনের বাস নিয়মিত চলাচল করছে। এসব বাসের টিকিট কাউন্টারও রয়েছে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে, যেখানে দিন-রাত যাত্রী ওঠানামা হয়, ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী ও বিশেষজ্ঞরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, প্রযুক্তিনির্ভর ফিটনেস যাচাই এবং অননুমোদিত পরিবহন বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগ।