সর্বশেষ

মতামত

ধর্মের খাতিরে সাফ-সাফ খেলা: পাকিস্তানি সংস্করণ

প্রকাশিত: ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০০:৩৭
ধর্মের খাতিরে সাফ-সাফ খেলা: পাকিস্তানি সংস্করণ

সকল প্রশংসা সেই মহান পাকিস্তানের, যাঁহার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সদ্যই ইসলামের খাতিরে বাংলাদেশকে অতীত ভুলিয়া যাওয়ার মহৎ পরামর্শ প্রদান করিয়াছেন। আহা! কী মহৎ হৃদয়! কী পবিত্র অভিপ্রায়! যেন একখণ্ড আরশে মোকামের রঙিন রুমাল উড়িয়া আসিল বঙ্গোপসাগরের বাতাসে।

 

বাংলাদেশের জন্ম লগ্নে পাকিস্তান যখন ত্রিশ লক্ষ মানুষকে ইসলামের দোহাই দিয়ে সাফ করিয়া দিল, তখন পাকিস্তানের আকাশে ধর্মের পতাকা এমনভাবে পতপত করিতে লাগিল, যেন ফেরেশতাগণও বিভ্রান্ত হইয়া পড়িলেন—এ কি ধর্মের জ্যোতি, না রক্তের ছিটেফোঁটা? যখন দুই লক্ষ বাংলার নারী ধর্ষিত হইলেন পাকিস্তানিদের ধর্মরক্ষার মহান ব্রত পালনে, তখন ধর্ম এমন জৌলুশে চমকাইতে লাগিল, যে চমক আরশে মোকাম পর্যন্ত পৌঁছাইয়া গেল। ফেরেশতাগণ হয়তো ভাবিলেন, “ইহাই বুঝি নবধর্মীয় জিহাদ!”

 

পাকিস্তান তখন ইসলামের নাম লইয়া এমন এক খেলায় মত্ত, যাহা দেখিয়া শয়তানও লজ্জায় মুখ ঢাকিল। এক মুসলিম রাষ্ট্র আরেক মুসলিম রাষ্ট্রের উপর এমন নিপীড়ন চালাইল, যেন ইসলাম হইল তাদের কাছে অত্যাচারের লাইসেন্স। ধর্মের দোহাই দিয়া শোষণ, নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যা—সবই হইল ‘পবিত্র’ কর্ম। আহা! কী সৌন্দর্য! কী ধর্মীয় নৈতিকতা!

 

ইসলাম কি এতই ঠুনকো, যে তাহা অত্যাচারীর হাতিয়ার হইয়া মজলুমের রক্তে সিক্ত হইবে? না কি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের সংজ্ঞায় ইসলাম মানে ‘যাহা খুশি তাহাই করো, শুধু দোহাই দাও’? বাংলার মুসলমানেরা কি এতই বোকা, যে বারবার এই ধর্মীয় তামাশায় অংশগ্রহণ করিবে? না কি আমাদের সরকার এতই বেহায়া, যে এই ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদ করিবে না?

 

পাকিস্তান আজ বাংলাদেশের বুকে দাঁড়াইয়া বলিতেছে—“ভুলে যাও অতীত, ইসলামের খাতিরে।” বাহ! যেন ধর্ষকের মুখে নৈতিকতার ভাষণ। যেন খুনির হাতে শান্তির পতাকা। যেন আগুনের মধ্যে শান্তির ফুল ফোটানোর চেষ্টা।

 

বাংলাদেশের জন্ম লগ্নের ক্ষত, শহীদের রক্ত, মা-বোনের আর্তনাদ—সবই কি ইসলামের খাতিরে ভুলিয়া যাওয়া যাইবে? যদি তাই হয়, তবে ধর্ম কি শুধুই এক রাজনৈতিক মুখোশ? এক কলঙ্কিত ব্যানার, যাহা দুনিয়ার দরবারে ধর্মকে তামাশা বানায়?

 

পাকিস্তানের এই ঔদ্ধত্য, আর আমাদের সরকারের নির্লজ্জ নীরবতা—দুইই যেন এক ব্যঙ্গচিত্র। একদিকে ধর্মের নামে ধোঁকা, অন্যদিকে আত্মমর্যাদার নামে আত্মবিক্রয়। এই ব্যঙ্গের মঞ্চে আমরা সবাই দর্শক, কেউ কেউ অভিনেতা, আর ইসলাম? সে হয়তো এক কোণে বসিয়া কাঁদিতেছে—“আমি তো এমন ছিলাম না…”

 

লেখকঃ এক ক্লান্ত পেনসিল; যে তাহার কলঙ্কিত সময়ের দিনলিপি লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে

সব খবর

আরও পড়ুন

যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

বুদ্ধিজীবী দিবসে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

মতামত ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

রঙতুলির বিদ্রোহ শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মানবাধিকার সংকটের নতুন আতঙ্ক নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ব্যঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ডিসেম্বর আসিলেই যাহাদের চুলকানি বাড়ে

ব্যঙ্গ কলাম ডিসেম্বর আসিলেই যাহাদের চুলকানি বাড়ে

তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?

মতামত তারেক জিয়ার ঘরে ফেরা নিয়ে কেন এত অনিশ্চয়তা?