সর্বশেষ

এক ক্লান্ত পেনসিল’র ব্যঙ্গ কলাম

সেইফ-এক্সিট: একখানা দেশত্যাগের মহাকাব্য

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৯
সেইফ-এক্সিট: একখানা দেশত্যাগের মহাকাব্য

সাম্প্রতিক কালে ‘সেইফ-এক্সিট’ শব্দটি যেন জাতীয় অভিধানে নবজন্ম লাভ করিয়াছে। পূর্বে যাহা ছিল অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পের সময় ভবন হইতে নিরাপদে বাহির হইবার পথ, তাহা এখন রীতিমতো রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ বলিয়া গণ্য হইতেছে। বিশেষত কতিপয় উপদেষ্টা, সমন্বয়কারী ও ছাত্রনেতাগণের মুখে এই শব্দটি এমনভাবে উচ্চারিত হইতেছে, যেন তাহারা তসবিহ হাতে লইয়া জপ করিতেছেন—“সেইফ-এক্সিট, সেইফ-এক্সিট…”

 

দেশের দুর্দশা, জনজীবনের হাহাকার, অর্থনীতির হেঁচকি, প্রশাসনের হাঁপানি—সবই যেন তাহাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে। কারণ, তাঁহারা এখন ‘পাসপোর্ট ভারি’ করিবার মহাযজ্ঞে নিমগ্ন। সরকারি খরচে এদেশ হইতে সেদেশ, সেদেশ হইতে ওদেশ—যাত্রা অব্যাহত। যাহারা এককালে ছাত্রদের ‘আদর্শ’ ছিলেন, তাহারা এখন ধান্দার দালাল। যাহারা সমন্বয় করিতেন, তাহারা এখন টেন্ডার বাণিজ্যের সম্রাট। পকেটে বিমানের টিকিট, হাতে লাগেজ, মুখে হাসি—“আমরা গেলুম, তোমরা এই বাংলাদেশ লইয়া পড়িয়া থাকো।”

 

এ এক আশ্চর্য সময়! যেখানে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা হইতেছে—যত দ্রুত সম্ভব দেশ হইতে প্রস্থান কর। যাহারা এককালে বলিতেন, “দেশের জন্য জীবন দিব,” তাহারা এখন বলিতেছেন, “দেশের জন্য জীবন রাখিব না, সেইফ-এক্সিট চাই।” এমনকি শুনা যায়, এক উপদেষ্টা নাকি নিজের অফিসে ‘সেইফ-এক্সিট’ বোতাম বসাইয়াছেন—চাপ দিলেই বিমানের টিকিট, ভিসা, হোটেল বুকিং, সব প্রস্তুত!

 

জনগণ হতবাক। তাঁহারা ভাবিতেছেন, “আমরা তো আন্দুলন করলুম উন্নয়নের জন্য, এখন দেখি উন্নয়ন হইতেছে পাসপোর্টে।” এক বৃদ্ধ বলিলেন, “ছেলেটারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাইছিলাম দেশ গড়িবার জন্য, এখন দেখি সে বিদেশ গড়িতে ব্যস্ত।” এক তরুণী বলিলেন, “আমার ভাই ছাত্রনেতা ছিল, এখন সে দুবাইয়ে ‘সেইফ-এক্সিট’ নিয়া সেমিনার করিতেছে।”

 

এদিকে, যাহারা এখনও দেশে রহিয়াছেন, তাহারা যেন একপ্রকার ‘বোকা’ বলিয়া বিবেচিত। কারণ, তাঁহারা সেইফ-এক্সিট লইতে ব্যর্থ। তাঁহারা এখনও বিশ্বাস করেন, দেশটা আমাদের, গড়িতে হইবে। অথচ চারিদিকে সেইফ-এক্সিটের জয়জয়কার। যেন, “দেশে থাকিলে বিপদ, বিদেশে গেলে প্রাপ্তি।”

 

শেষে এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলিলেন, “এই সেইফ-এক্সিট আসলে একখানা আত্মরক্ষার কৌশল। যাহারা বুঝিয়াছে, তাহারা চলিয়া গিয়াছে। যাহারা বুঝে নাই, তাহারা এখনও দেশপ্রেমে বিভোর।” তিনি আরও বলিলেন, “লিখিয়া রাখো, এক বস্তা দিলেন জঙ্গী, আর এক বস্তা নিলেন উপদেষ্টা।”

 

এই হইল আমাদের সময়ের স্যাটায়ার। যেখানে ‘সেইফ-এক্সিট’ হইতেছে নতুন জাতীয় স্লোগান, আর দেশ হইতেছে একখানা ‘চেক-ইন ডেস্ক’। যাহারা গিয়াছে, তাঁহারা সেইফ; যাহারা রহিয়াছে, তাঁহারা এক্সিটের অপেক্ষায়।

 

লেখক: এক ক্লান্ত পেনসিল, যে তাহার বিপদাপন্ন সময়কে আতঙ্কের কালিতে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে

সব খবর

আরও পড়ুন

নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ মিশনে সর্বপ্রথম বিজয় দিবস পালন

স্মৃতিকথা নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ মিশনে সর্বপ্রথম বিজয় দিবস পালন

নয়া বন্দোবস্তের বাংলাদেশে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে জামাতময় বিজয় উৎসব

মতামত নয়া বন্দোবস্তের বাংলাদেশে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে জামাতময় বিজয় উৎসব

যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

বুদ্ধিজীবী দিবসে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি যে ইতিহাস শিক্ষক জানতেন পাকিস্তান টিকবে না

ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

মতামত ডিসেম্বরের কাছে ফিরে যাওয়া: তরুণদের বাংলাদেশ ও এক অসমাপ্ত স্বপ্ন

হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস : বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি হাত-পা বাঁধা লাশ, অশ্রুসিক্ত বিজয়—জাতিকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা

শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

রঙতুলির বিদ্রোহ শিল্পীর রেখায় মুক্তির স্বপ্ন

নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মানবাধিকার সংকটের নতুন আতঙ্ক নিখোঁজ এস এম কামরুজ্জামান সাগরকে ঘিরে উদ্ভূত উদ্বেগ ও জাতির দায়বদ্ধতা

মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস

ব্যঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের নয়া বয়ান: জামায়াতের সহীহ ইতিহাস