শঙ্করের মোড়ে লাল ইটের দালান, ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকতে চায়, কিন্তু মেঘের কালো পর্দা তাকে ঠেকায়। ১৯ ডিসেম্বরের ভোরে যেন শোকের ঘণ্টা বাজে, এক অদৃশ্য মঞ্চে শুরু হয় অশুভ নাটক, বাংলাদেশের বুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বেদনার ধ্বনি।
ছায়ানট, যে ছিল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র, আজ তার দরজা ভাঙা। এটি কেবল ইট-পাথরের ক্ষত নয়, এটি কবিতার গলা চেপে ধরা, এটি সংগীতের তার ছিঁড়ে ফেলা, এটি মানবিকতার বুক ছিঁড়ে আগুন ধরানো।
জুলাই সহিংসতাকে যারা একদিন স্বাগত জানিয়েছিলো, তারা ভেবেছিলো এটি হবে দুর্নীতির শৃঙ্খল ভাঙার সূচনা। কিন্তু আজ সেই আন্দোলনের ফল ঝরে পড়েছে জামায়াতের বিষাক্ত গোলায়। যারা একসময় স্লোগান দিয়েছিলো মুক্তির নামে, তাদের চোখে এখন আতঙ্কের ছায়া কারণ তারা দেখছে, কালসাপের মতো শক্তি ক্ষমতার সিংহাসনে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসেছে।
জামায়াত বহুদিন ধরেই ইতিহাসের পাতা ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছে, শহীদদের রক্ত মুছে দিতে চেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধোঁয়াশায় ঢেকে দিতে চেয়েছে। আজ তারা ক্ষমতার চূড়ায় বসে নতুন করে লিখতে চাইছে ইতিহাস যেন প্রজন্ম ভুলে যায় স্বাধীনতার গান, যেন মুক্তির চেতনা হয়ে যায় অচেনা।
ইসলামের পবিত্রতার অপব্যাখ্যা দিয়ে তারা ক্ষমতার দুর্গ গড়ে তুলছে। সাধারণ মানুষ ধর্মকে ভালোবাসে, কিন্তু প্রতারণার মুখোশ চিনতে পারে না। তাদের ভালোবাসা হয়ে উঠছে ফাঁদ, যেখানে বিশ্বাসের আলো নিভে যায় আর মৌলবাদের অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে।
যারা জুলাই আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন, আজ তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে কাঁদছেন। তাদের চোখে ভেসে উঠছে সেই বাংলাদেশ যেখানে ছায়ানটের দরজা ভাঙা হয়, কবিতা আগুনে পোড়ে, সংগীতের সুর নিস্তব্ধ হয়ে যায়, আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অস্বীকার করা হয়।
জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতির কালসাপ যে ধীরে ধীরে সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিষ। আওয়ামী লীগ যে কেন সবসময় জুজুর ভয় দেখাতো জামায়াতের নামে, আজ তারই বাস্তব রূপ দাঁড়িয়ে আছে সামনে। বাংলাদেশ যদি এই ছলনা চিনতে না পারে, তবে বিশ্বে তার নাম লেখা হবে এক উগ্র মৌলবাদী রাষ্ট্রের শোকগাঁথায়।