জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মশাল মিছিল, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ, তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। তফসিল বাতিল, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবিতে দলটি তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গণভবন এলাকার আওরঙ্গজেব রোডে একঝাঁক নেতাকর্মী মশাল জ্বালিয়ে মিছিল করেন। মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানান, রাত ১০টার দিকে মিছিলটি খুব অল্প সময়ের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আবু সায়েম বলেন, মিছিলকারীরা ‘জয় বাংলা’, ‘অবৈধ সরকারের তফসিল মানি না মানবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলের সামনে-পেছনে মোটরসাইকেলও দেখা যায়। পুলিশ বলছে, অংশগ্রহণকারীদের শনাক্তে চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার মোহাম্মদপুর আসাদগেট এলাকায় জুমার নামাজের পর আবারও আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল দেখা যায়। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ব্যানারসহ দুজনকে আটক করে—নওশের আলম পরশ ও মনির হোসেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আরেকজনকে আটকেরও তথ্য মিলেছে।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলাতেও বৃহস্পতিবার রাতে তফসিল বাতিলের দাবিতে বড় ধরনের মশাল মিছিল হয়। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের মিরাশা এলাকায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন বলে জানিয়েছে জাজিরা থানা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৬৫টি মশাল উদ্ধার করে এবং সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করে। মিছিলের বেশ কয়েকজনকে মুখোশ পরা অবস্থায় ভিডিওতে দেখা গেছে, যা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজগুলোতে প্রকাশিত হয়।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, সদর ও কাজিপুরেও একই রাতে খণ্ড খণ্ড আকারে মশাল মিছিল বের হয়। উল্লাপাড়ার শ্যামলীপাড়া এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে মিছিলকারীরা। পুলিশ ঘটনা জানতে পেরে সেখানে পৌঁছালে তারা দ্রুত সরে পড়ে। কাজিপুরেও বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীরা মশাল হাতে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। সদর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, রায়পুর ও চররায়পুর এলাকায় মশাল মিছিলের তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।
পুলিশ সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রায় ৯০টি স্থানে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের মশাল মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে দলটির প্রচারপত্র অনুযায়ী, তিন দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সারা দেশে মশাল মিছিল, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল এবং শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা ‘লকডাউন’ পালনের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা দাবি করছে, বর্তমান সরকার ‘অবৈধ’ এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ড. ইউনূসের পদত্যাগ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ আট দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন হিসেবে এসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
দলটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত ‘অবৈধ নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের শান্তিকামী জনগণকে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।