বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নাশকতা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে ঘিরে দেশের একাধিক রাজনৈতিক দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এসব ঘটনার মাধ্যমে ‘তালিবানি ধাঁচের ইসলামী শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের একটি সুপরিকল্পিত মহড়া চলছে। ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর ভারতবিরোধী স্লোগান, সংখ্যালঘু ও মুক্তমনা ব্যক্তিদের ওপর হামলা এবং দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতিকে একই সূত্রে দেখছে তারা।
শুক্রবার ভারতের একটি সংবাদপত্রে দেওয়া মন্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ইসলামী শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি শুধু দেশের ভেতরেই নয়, প্রতিবেশী ভারতের জন্যও গুরুতর হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটিও শুক্রবার বৈঠকে বসে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিশ্লেষণও অনেকাংশে জয়ের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বিশেষ করে ভোটের তফসিল ঘোষণার পরপরই যেভাবে সহিংসতা বেড়েছে, তা নির্বাচন বানচালের কৌশল বলেই মনে করছে দলটি।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর দীর্ঘ ১৮ বছর পর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘিরে বড় ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশের পরিকল্পনা থাকলেও, চলমান অরাজকতার কারণে সফর পেছানো হবে কি না, সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দলীয় স্থায়ী কমিটি নির্ধারিত দিনেই তাঁর দেশে ফেরার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
বিএনপি নেতাদের দাবি, মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলি ‘আরব বসন্ত’-এর আদলে বাংলাদেশে নির্বাচন ভেস্তে দিয়ে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার ছক কষছে। হাদির ওপর হামলা, অভিযুক্তদের অনায়াসে দেশত্যাগের সন্দেহ এবং পরবর্তী সহিংসতা—সবই সেই পরিকল্পনার অংশ বলে তারা মনে করছে। দলটির অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির প্রশিক্ষিত কর্মীদের নাশকতায় নামিয়েছে।
বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিও এই বিশ্লেষণকে সমর্থন করছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এই সহিংসতার মূল উদ্দেশ্য দুটি—নির্বাচন ভণ্ডুল করা এবং ইসলামী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।’ তাঁর মতে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করাই এখন দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে যেমন উদ্বেগ বাড়ছে, তেমনি এর প্রভাব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপরও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।