সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভাগনি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দেওয়া দণ্ডাদেশ নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবীদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন’স হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউট (আইবিএএইচআরআই)’। সংস্থাটি বলেছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কঠোরভাবে অনুসরণ না করলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
এক বিবৃতিতে আইবিএএইচআরআই জানায়, আগের প্রশাসনে সংঘটিত গুরুতর অপরাধ তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিচারিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করলে তা গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণের ইঙ্গিত দেয়। সংস্থাটি সর্বাবস্থায় মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এ ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড পূরণ করে না।”
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। একইসঙ্গে প্লট দুর্নীতির একটি মামলায় শেখ রেহানার মেয়ে, ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনজনই বিচার চলাকালে অনুপস্থিত থাকায় তাদের ‘পলাতক’ দেখিয়ে মামলাগুলো পরিচালিত হয়।

টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ অস্বীকার করে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানান, “এই পুরো প্রক্রিয়া শুরু থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক। এটি একটি ক্যাঙ্গারু কোর্টের রায়।”
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘ল গ্যাজেট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনি দল অভিযোগ করেছে—অভিযোগ গঠনের আগে আসামিকে আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানো, পছন্দের আইনজীবী নিয়োগে বাধা, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগের সুযোগ না থাকা—এসবই ন্যায্য বিচারের স্বীকৃত মানদণ্ডের বিরোধী।
আইবিএএইচআরআই-এর সহ–সভাপতি মার্ক স্টিফেনস বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিকের মামলায় আইনজীবীদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এসেছে। এটি ন্যায়বিচারের অধিকারের ভিত্তিকে আঘাত করে এবং বাংলাদেশের আইনের শাসনকে দুর্বল করে।”
সংগঠনটি মৃত্যুদণ্ডের ওপর তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ ঘোষণা ও ভবিষ্যতে এটি পুরোপুরি বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে আইন পেশাজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক প্রতিশোধের ধারা বন্ধ করা এবং সত্যিকারের ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।