২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ও ‘গণহত্যা’র অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বিবিসি বাংলার সাবেক প্রধান সাবির মোস্তফা। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, সেদিন রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় শাপলা চত্বরের ভেতরে কোনো গণহত্যার ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিবিসির সাংবাদিকরা যা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, বিবিসি সেদিন ঠিক সেটাই প্রচার করেছে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবির মোস্তফা জানান, ৫ মে রাতে বিবিসি বাংলার ঢাকা প্রতিনিধি কাদির কল্লোল শাপলা চত্বরে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। লন্ডন থেকে তিনি নিজেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, “মাঠে আমাদের রিপোর্টার কী দেখছেন, কী ঘটছে-সবকিছু আমরা ধাপে ধাপে যাচাই করেছি।”
গুজব বনাম বাস্তবতা
সেই রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক গুজব ছড়ায় যে শাপলা চত্বরে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, লাশ গুম করা হচ্ছে এবং এলাকা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হচ্ছে। এসব দাবি যাচাই করতে বিবিসির প্রতিনিধিকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে জানান সাবির মোস্তফা। তিনি বলেন, “কাদির কল্লোল নিশ্চিত করেছিলেন, সেখানে কোনো ‘লাইভ ফায়ারিং’ হয়নি, তিনি কাউকে নিহত হতে দেখেননি; এমনকি দেয়ালে গুলির দাগ বা রাস্তায় রক্তের চিহ্নও ছিল না।”
মানবাধিকার সংস্থার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অধিকারসহ কিছু মানবাধিকার সংস্থা যথাক্রমে ৫৮ এবং ৬১ জন নিহতের তালিকা প্রকাশ করলেও ‘শাপলা চত্বরের মূল রাত্রিকালীন অভিযানে’ নিহতদের সুনির্দিষ্ট নাম তারা দেখাতে পারেনি বলে দাবি করেন সাবির মোস্তফা। তিনি প্রশ্ন তুলেন, যদি সত্যিই গণহত্যা হয়ে থাকে, তবে সেদিন রাতে শাপলা চত্বরের ভেতর থেকে কেন কোনো যাচাইযোগ্য নিহতের তালিকা পাওয়া যায়নি?
মৃত্যু কোথায় হয়েছিল?
সাবির মোস্তফা ব্যাখ্যা করেন, ৫ ও ৬ মে দেশের বিভিন্ন স্থানে—ঢাকা, হাটহাজারী, বরগুনা ও নারায়ণগঞ্জে—হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হন যারমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। বিবিসি তখন প্রায় ২০ জনের মৃত্যুর খবর যাচাই করে প্রচার করেছিল। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যে ‘শাপলা চত্বর গণহত্যা’র কথা বলা হয়, সেটি রাতের অভিযানের সময় শাপলা চত্বরের ভেতরে ঘটেনি।”
বিবিসির অবস্থান
শাপলা চত্বরের সংবাদ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সাবির মোস্তফা বলেন, “কে কী বলল, তাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমরা জানি সেদিন কী ঘটেছিল। আমাদের রিপোর্টাররা যা দেখেছেন, আমরা যা যাচাই করতে পেরেছি শুধু সেই সত্যটুকুই আমরা প্রচার করেছি।”