বাংলাদেশে আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে বিভিন্ন জেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাগেরহাট ও ফরিদপুরে চলমান আন্দোলন এরই অংশ। সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে বাগেরহাটে অবস্থান কর্মসূচি এবং ফরিদপুরে অবরোধের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস অবরোধ
বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকে টানা আন্দোলন চলছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলার সব উপজেলা ও জেলা নির্বাচন অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বাগেরহাট সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন অন্যায়ভাবে বাগেরহাটের একটি সংসদীয় আসন কমিয়ে দিয়েছে। অথচ ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, মোংলা বন্দর, ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল ও দুটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের কারণে চারটি আসন বহাল রাখা জরুরি। একটি আসন কমলে জেলার জনগণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, চাকরি ও সরকারি সেবায় বঞ্চিত হবে।”
তিনি আরও জানান, জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ে সর্বদলীয় কমিটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। মঙ্গলবারও একই দাবিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ফরিদপুরে অবরোধ স্থগিত
অন্যদিকে, ফরিদপুর-৪ আসনের (ভাঙ্গা) পুনর্বিন্যাসের দাবিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচি চার দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লার আশ্বাসে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ফরিদপুর-৪ আসনের আওতাধীন আলগি ও হামেরদি ইউনিয়নকে নগরকান্দায় সংযুক্ত করা হলে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় তারা কয়েকদিন ধরে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
গত শনিবার রাতে নগরকান্দা থেকে আলগি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানকে আটক করা হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর পুলিশ ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে ও দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করে। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ভাঙ্গা থানাসহ উপজেলা প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর চালায়।
তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যার সমাধানে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর আশ্বাস এবং আসন্ন ২১ সেপ্টেম্বর আদালতে দায়েরকৃত রিটের শুনানির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানানোয় আপাতত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছে এলাকাবাসী।
বাগেরহাট ও ফরিদপুরের এই দুই ভিন্ন আন্দোলন একই ইস্যুকে ঘিরে—সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ মনে করছেন, আসন সংখ্যা কমানো হলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও উন্নয়ন বঞ্চিত হবে। ফলে এই আন্দোলন দ্রুত সমাধান না হলে দেশের আরও অঞ্চলে অনুরূপ অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের।