ইসরায়েলি বাহিনীর টানা বিমান ও স্থল হামলায় গাজা সিটি ও আশপাশের শহরগুলো একের পর এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। প্ল্যানেট ল্যাবস ও রয়টার্সের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, মার্চের তুলনায় সেপ্টেম্বরের গাজা যেন এক বিপর্যস্ত ভূখণ্ড—ভাঙা ভবন, গুঁড়িয়ে দেওয়া বাজার, নিশ্চিহ্ন জনপদ।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ৫০টি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে। জায়তুন শহরে আগস্টের শুরু থেকে ১৫০০টির বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। শহরটির বেশিরভাগ অংশে এখন আর কোনো ভবন অবশিষ্ট নেই।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী বাসিন্দাদের দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় যেতে বাধ্য করছে। কিন্তু সালাহ আল-দিন রোড স্নাইপারদের দখলে, আর আল-রশিদ রোডে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু বসায় যান চলাচল বন্ধ। এমনকি ঘোষিত “মানবিক অঞ্চল” আল-মাওয়াসিতেও নিরাপত্তা নেই।
স্যাটেলাইট ছবিতে গাজার উত্তরাঞ্চলের নয়টি এলাকায় হামলার আগের ও পরের চিত্র উঠে এসেছে:
শেখ রাদওয়ান: জনাকীর্ণ বাজার ও সরু রাস্তার এই এলাকায় ট্যাংক ঢুকে বাড়িঘর ও তাঁবু গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
রেমাল: গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা, জাতিসংঘের কার্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ—সবই ক্ষতিগ্রস্ত। মুস্তাহা টাওয়ার, আল-রুয়া ভবনসহ বহু বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে।
তুফাহ: একসময়কার প্রাণবন্ত বাজার ও স্কুলের এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপ।
সাবরা ও জায়তুন: ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া হামলায় ১ হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে। শত শত মানুষ চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তূপে।
শুজাইয়া: ইসরায়েল সীমান্তঘেঁষা এই এলাকা বারবার হামলার শিকার। বাজার, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস।
বেইত লাহিয়া: একসময় ‘রেড গোল্ড’ নামে পরিচিত স্ট্রবেরি খেতগুলো বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আইপিসি জানিয়েছে, এখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।
বেইত হানুন: এরেজ ক্রসিং বন্ধ থাকায় মানবিক সংকট চরমে। সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
জাবালিয়া: গাজার বৃহত্তম শরণার্থী ক্যাম্প। জাতিসংঘের স্কুলগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত হলেও বারবার হামলার শিকার।
এই স্যাটেলাইট চিত্রগুলো শুধু ধ্বংসের নয়, বরং এক জাতির অস্তিত্ব সংকটের দলিল। বাস্তুচ্যুতির পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার সংকটে গাজা এখন এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।