আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আবারও কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১৬ মাসের দায়িত্বকালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি তো হয়নিই, ক্ষেত্র বিশেষে আরো অবনতি হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের দণ্ডমুক্তির সংস্কৃতি এই মৃত্যুগুলোর প্রধান কারণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও জবাবদিহির অভাব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে আটক হওয়ার পর প্রবাসী হযরত আলীর ক্ষতবিক্ষত লাশ পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় থানা ওসি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। যৌথ বাহিনী অভিযানের কথা শুধু উল্লেখ করেন। আবার সেপ্টেম্বরে একই জেলার ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নে আটক আবদুল্লাহ পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের পর পাঁচ দিনেই মারা যান। ওই ঘটনায় এক সাব-ইন্সপেক্টরকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীরা পূর্ণ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি–নভেম্বর পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতনে অন্তত ২৯ জন নাগরিক মারা গেছেন। একই সময়ে কারাগারে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ জনের—এর মধ্যে ৬৪ জন হাজতি ও ৩১ জন দণ্ডপ্রাপ্ত। আগের বছরগুলোতেও এই সংখ্যা ছিল উদ্বেগজনক; ২০২৪ সালে ৬৫ জন, ২০২৩ সালে ১০৬ জন এবং ২০২২ সালে ৬৫ জন।
তবে কারা অধিদপ্তর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, অধিকাংশ মৃত্যু ‘অসুস্থতা’জনিত। পুলিশ সদর দপ্তরও দাবি করে, কখনো কখনো গণপিটুনির শিকার বা আত্মহত্যার ঘটনাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো হেফাজতে মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত করে থাকে।
মানবাধিকারকর্মীরা এসব ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, সুষ্ঠু স্বাধীন তদন্ত ছাড়া সত্য উদঘাটন সম্ভব নয়। গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, “অভিযুক্তরা এখনো ক্ষমতার ভেতরে-বাইরে সক্রিয়। জবাবদিহি না থাকলে এই সংস্কৃতি চলতেই থাকবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক মনে করেন, গ্রেপ্তারের স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি—“আটক ব্যক্তির অবস্থান ও অবস্থা পরিবারকে জানানো বাধ্যতামূলক করা উচিত। এতে নির্যাতন ও অপব্যবহার কমবে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, কাঠামোগত সংস্কারই পারে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যুর সংস্কৃতি থামাতে।