বাংলাদেশে বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক অধিকার সংগঠন গ্লোবাল বাংলাদেশ ইউনিটি নেটওয়ার্ক (GBUN)। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আইন ব্যবহারের অপব্যবহার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ভয়াবহভাবে সংকটাপন্ন করে তুলেছে।
সংগঠনটির পক্ষে ফয়েজ খান তৌহিদ কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক বিচারপতি, অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, শিল্পী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, বরং জাতির গণতান্ত্রিক ও বৌদ্ধিক স্বাধীনতার ওপর বড় ধরনের আঘাত।
অন্যায়ভাবে আটক শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক সচিব ও সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদা, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বিএমএ সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক ভিসি ড. নাজমুল আহসান কালিমুল্লাহ, বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনওয়ারা বেগম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত, শিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবু, ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ প্রমুখ।
GBUN মনে করে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংগঠনটির দাবি, এটি শুধু ব্যক্তির ওপর নয়, বরং পুরো জাতির গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর আঘাত, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডেরও পরিপন্থী। বিবৃতিতে সংগঠনটি বেশ কিছু দাবী উথ্থাপন করেছে যার মধ্যে অন্যতম হলঃ
• সব শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অবিলম্বে মুক্তি।
• রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ।
• সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
• প্রত্যেকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্ত।
GBUN জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ ও বাংলাদেশের নাগরিকদের এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
কবি, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবুল হাসনাত মিল্টন, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নীরু কামরুন নাহার, কানাডার শেরিডান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ও প্রাক্তন সিনেট স্পিকার ড. মজাম্মেল খান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও সমাজকর্মী ড. আব্দুল আওয়াল, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. এম. ওসমান গনি তালুকদার, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, অস্ট্রেলিয়ার কৃষিবিজ্ঞানী ড. তারিক জামান, সিডনির অ্যাকনলেজ এডুকেশনের সহযোগী অধ্যাপক প্রফেসর ড. মাহবুব আলম প্রদীপ, যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারকর্মী ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. রাইহান রশিদ, আইনজীবী ব্যারিস্টার সাঈদ আবেদিন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী প্রফেসর ড. হানিফ সিদ্দিক, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের চিকিৎসক ড. বিশ্বজিৎ রায় সেতু, অস্ট্রেলিয়ার সহযোগী অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত হোসেন, নরওয়ের গবেষক ড. আমিনুর রহমান এবং স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক আলতাফ হোসেন রাসেলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২৯২ জন প্রবাসী শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, শিল্পী, মানবাধিকারকর্মী ও পেশাজীবী এই বিবৃতিতে সই করেছেন।
GBUN বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং গণতান্ত্রিক সংলাপ ও সহনশীলতার ভিত্তিতে একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে পারে।