সর্বশেষ

মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষ মানবাধিকার কমিশনে বসানোর দরকার নেই: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৫৬
মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষ মানবাধিকার কমিশনে বসানোর দরকার নেই: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
রাজধানীর গুলশানে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) যেন আর মেরুদণ্ডহীন বা নখ-দন্তহীন না হয়—এই দাবি তুলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

 

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শীর্ষক সংলাপে তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশে নখ-দন্তহীন মানবাধিকার কমিশন উপহার দেওয়া হয়েছে। এমন কমিশনের দাঁতও নেই, কামড়ও দিতে পারে না। এর কোনো দক্ষতা ও কার্যকারিতাও ছিল না।

 

ড. দেবপ্রিয় বলেন, “এমন নখ-দন্তহীন মানবাধিকার কমিশনের মাথায় যদি মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষ বসানো হয়, তবে তিনি কোনো দিন কারও জন্য নিজের মেরুদণ্ড সোজা করতে পারবেন না। তাই মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষ কমিশনে বসানোরও দরকার নেই।”

 

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এমন একটি মানবাধিকার কমিশন, যা সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকার রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখতে পারবে। নেতৃত্বে বসাতে হবে নীতিমান, সৎ এবং প্রয়োজন হলে সরকারের সঙ্গেও লড়াই করতে সক্ষম এমন মানুষকে।”

 

ড. দেবপ্রিয় মনে করিয়ে দেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রথম খসড়া আকারে তৈরি হয়। পরবর্তীতে সেই আইনের ভিত্তিতে কমিশন গঠন করা হলেও কার্যত সেটি ছিল দুর্বল। একাধিক চেয়ারম্যান নিয়োগ পেলেও কমিশন কখনো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।

 

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী কমিশন বাতিল করে দেয়। এর ফলে প্রায় এক বছর ধরে দেশে কোনো মানবাধিকার কমিশন নেই। অথচ একই সময়ে অন্যান্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।

 

সংলাপে অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, অতীতে কমিশন অনেক ক্ষেত্রে কাজ করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি মনে করেন, নতুন খসড়ায়ও এ দিকটি উপেক্ষিত রয়েছে।

 

বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত খসড়ায় দুটি লক্ষ্য থাকা উচিত। এক—আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে কমিশনের গঠন, স্বাধীনতা ও কার্যপরিধির বিশ্লেষণ। দুই—কমিশনকে আরও কার্যকর করার সুপারিশ, যাতে নির্ভরযোগ্য অনুসন্ধানী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং ভুক্তভোগী ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারে।

 

এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক ও সারা হোসেন, চাকমা সার্কেলের প্রধান রানী ইয়ান ইয়ানসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

অংশগ্রহণকারীরা বলেন, মানবাধিকার কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বাধীন এবং শক্তিশালী না করলে এ প্রতিষ্ঠান জনআস্থা অর্জন করতে পারবে না।

সব খবর

আরও পড়ুন

মব সহিংসতা, গণপিটুনি ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপে অক্টোবরে মানবাধিকার চিত্র উদ্বেগজনক

এইচআরএসএস-এর প্রতিবেদন মব সহিংসতা, গণপিটুনি ও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপে অক্টোবরে মানবাধিকার চিত্র উদ্বেগজনক

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেড়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা

‘অধিকার’-এর অভিযোগ অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেড়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্তত ৪০টি

মানবাধিকার সঙ্কটে দেশ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অন্তত ৪০টি

আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১২ দফা সুপারিশ ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার

ড. ইউনূসকে খোলা চিঠি আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১২ দফা সুপারিশ ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার

অন্তর্বর্তী সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার আহ্বান ভলকার তুর্কের

অন্তর্বর্তী সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার আহ্বান ভলকার তুর্কের

বাংলাদেশের ‘বিতর্কিত’ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগে উদ্বিগ্ন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

বাংলাদেশের ‘বিতর্কিত’ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগে উদ্বিগ্ন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫ ব্রিটিশ এমপি

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫ ব্রিটিশ এমপি

সরকারের একপাক্ষিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ ও সহিংসতা সরকারের একপাক্ষিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন