সর্বশেষ

বিবিএস জরিপ

প্রতি দুই নারীর একজন স্বামীর সহিংসতার শিকার

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১:২২
প্রতি দুই নারীর একজন স্বামীর সহিংসতার শিকার
‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ-২০২৪’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিবিএস

বাংলাদেশে প্রতি দুইজন নারীর মধ্যে একজন স্বামীর সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে, দেশের ৭৬ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে জীবনসঙ্গীর সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতা, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ। গত এক বছরে ৪৯ শতাংশ নারী স্বামীর হাতে এমন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

 

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ–২০২৪’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। জরিপ উপস্থাপন করেন ‘জিওস্পেশিয়াল ইনফরমেশন ইন্টিগ্রেটিং উইথ জেন্ডার অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস’ প্রকল্পের পরিচালক মীনাক্ষী বিশ্বাস।

 

জরিপে দেখা যায়, তিনজনের মধ্যে দুইজন ভুক্তভোগী (৬২ শতাংশ) কখনোই সহিংসতার কথা প্রকাশ করেননি বা সাহায্য চাননি। সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। নন-পার্টনার (অপরিচিত বা আত্মীয়) কর্তৃক সহিংসতার ক্ষেত্রে এই হার আরও কম, মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

 

তবে ইতিবাচক দিক হলো ২০১৫ সালে স্বামী কর্তৃক সহিংসতার হার যেখানে ছিল ৬৬ শতাংশ, তা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে। তবুও বিবিএস বলছে, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা পেতে সামাজিক বাধা ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা এখনো বড় সমস্যা।

 

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৫৪ শতাংশ নারী জীবদ্দশায় স্বামীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের ৬০ শতাংশই গত এক বছরে একাধিকবার এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন। গর্ভাবস্থাতেও সহিংসতা থেকে রেহাই পান না নারীরা। ৭ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক ও ৫ দশমিক ৩ শতাংশ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

 

অন্যদিকে, ১৫ বছর বয়স থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ শতাংশ নারী স্বামী ছাড়া অন্য কারও হাতে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, এবং ২ দশমিক ২ শতাংশ নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা। যৌন সহিংসতার বেশিরভাগই ঘটেছে পরিচিত পুরুষদের মাধ্যমে, যেমন, আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশী।

 

প্রযুক্তি-নির্ভর সহিংসতাও বেড়েছে। ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী ডিজিটাল মাধ্যমে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে যৌন ব্ল্যাকমেইল, ছবি অপব্যবহার ও অনলাইন হয়রানি উল্লেখযোগ্য।

 

জরিপে আরও জানা যায়, ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী জানেন না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়, আর মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী সহিংসতা প্রতিরোধ হেল্পলাইন ‘১০৯’ সম্পর্কে জানেন।

 

বিবিএস জানায়, কম বয়সে বিয়ে, যৌতুক, স্বামীর মাদকাসক্তি বা পরকীয়া, এবং শহরের বস্তিতে বসবাস নারীদের সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়। বিপরীতে, স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। নন-পার্টনার সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীর কম বয়স, সীমিত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধিতা প্রধান ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মুস্তারি এবং ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

 

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন উইমেন’স অ্যাফেয়ার্স রিফর্ম কমিশনের চেয়ারপার্সন শিরীন হক, এসপিবিএনের ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার। তারা বলেন, “সহিংসতার বিরুদ্ধে নীরবতা ভাঙা এখন সময়ের দাবি।”

সব খবর

আরও পড়ুন

অক্টোবরে দেশে ২৩১ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার

মহিলা পরিষদের বিবৃতি অক্টোবরে দেশে ২৩১ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার

গণমাধ্যমকর্মী স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি

২৪৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি গণমাধ্যমকর্মী স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি

কেন এই পথ বেছে নিলেন স্বর্ণময়ী?

ঢাকা স্ট্রিম কর্মীর মৃত্যুতে বিতর্ক কেন এই পথ বেছে নিলেন স্বর্ণময়ী?

অভিযোগপত্রে ক্ষুব্ধ বাদী, তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ পুলিশের

পল্লবীতে নারী সাংবাদিক ধর্ষণ অভিযোগপত্রে ক্ষুব্ধ বাদী, তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ পুলিশের

‘রাজনীতিতে নারীরা কোথায়’

সমালোচনার মুখে ঐকমত্য কমিশন ‘রাজনীতিতে নারীরা কোথায়’

সরাসরি আসনে ৫ শতাংশেও ইসলামপন্থি দলগুলোর ‘অনীহা’

সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব সরাসরি আসনে ৫ শতাংশেও ইসলামপন্থি দলগুলোর ‘অনীহা’

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে চাপা পড়া নারীদের বাঁচাতে বাধা শরীয়া আইন; পুরুষ অভিভাবকের অভাবে নারী উদ্ধারকর্মীও পাঠানো যাচ্ছেনা

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে চাপা পড়া নারীদের বাঁচাতে বাধা শরীয়া আইন; পুরুষ অভিভাবকের অভাবে নারী উদ্ধারকর্মীও পাঠানো যাচ্ছেনা

চলতি বছরের ৬ মাসেই ধর্ষণের ঘটনা গত বছরের সমান

মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন চলতি বছরের ৬ মাসেই ধর্ষণের ঘটনা গত বছরের সমান