ঢাকার বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। রাজধানীর সড়কে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে লক্কড়ঝক্কড় বাস, মিনিবাস, ট্রাক থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া। ২০–২৫ বছরের পুরোনো এসব যানবাহন ইঞ্জিনের অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে নিয়মিত কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। অথচ কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে প্রতিদিন হাজারো ফিটনেসহীন যান রাজধানীর বাতাসকে আরও বিষাক্ত করে তুলছে।
সরকার পিছু হটল মালিক-শ্রমিকদের চাপে
সরকার গত জুলাইয়ে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক সড়ক থেকে সরাতে অভিযান শুরু করেছিল। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের হুমকি দিলে সরকার দ্রুত পিছু হটে। পুরোনো যানবাহন উচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি কার্যকর না করে উল্টো মালিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পথে হাঁটা শুরু হয়।
আগে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন্ড বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইম মুভার আমদানির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৫ বছর। এখন তা বাড়িয়ে ১২ বছর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এসব যানবাহন কিনতে স্বল্প সুদে ঋণ ও কর সুবিধার প্রস্তুতিও চলছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে এ নিয়ে বৈঠক হয়, যেখানে পুরোনো যানবাহন আমদানির বয়সসীমা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে।
নীতিমালায় দ্বিধা, দূষণে ভুগছে নগরবাসী
নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আমদানির ক্ষেত্রে সব দেশের জন্য একই নিয়ম কার্যকর হবে। ফলে জাপান-ইউরোপের পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকেও ১২ বছরের পুরোনো গাড়ি আমদানি হতে পারে। অথচ এসব দেশের পুরোনো গাড়ির ফিটনেস ভালো নয় বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স নয়, বরং গাড়ির চলাচল দূরত্ব, জ্বালানি দক্ষতা ও দূষণ নির্গমনের মাত্রা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক বলেছেন, “বাস মালিকরা শুধু সুবিধা নেন, কিন্তু অনুপযোগী গাড়ি সরাতে চান না। বিআরটিএর কাঠামো দুর্বল হওয়ায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।”
দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার ৮৪ শতাংশ বাস-মিনিবাস, ৬৯ শতাংশ ট্রাক ও ৫৯ শতাংশ হালকা যান নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ধোঁয়া নির্গত করছে। এই কালো ধোঁয়া শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ এবং শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর অনাগত শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা
যোগাযোগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বারবার পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের চাপে নতি স্বীকার করছে। এর ফলে পুরোনো গাড়ি সড়ক থেকে সরানো যাচ্ছে না, উল্টো মালিকদের কর ও ঋণ সুবিধা দিয়ে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে শৃঙ্খলার পরিবর্তে নৈরাজ্যই বাড়ছে এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের বদলে সমস্যা আরও গভীর হচ্ছে।