সর্বশেষ

জাকসু নির্বাচন

ভোটের হিসাবে গরমিল নিয়ে বিতর্ক, প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৫৯
ভোটের হিসাবে গরমিল নিয়ে বিতর্ক, প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ ভোটে উৎসাহ ও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো—প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৮ শতাংশ ভোট প্রদান করেন। তবে ভোটের দিন অনিয়মের অভিযোগ, অধিকাংশ প্যানেলের বর্জন, ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রতা এবং এক শিক্ষকের মৃত্যু পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে এ নির্বাচনের ইতিহাসে।

 

সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ভোটের হিসাবে গরমিল ও অস্বচ্ছতা। হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ফল প্রকাশে বিলম্ব, সংখ্যা নিয়ে অসামঞ্জস্যতা এবং ভুল স্বীকার করায় পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রার্থীরা ও শিক্ষার্থীরা।

 

হাতে ভোট গোনায় বিপত্তি

 

ওএমআর মেশিন ব্যবহার না করে হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ ছিল—ব্যালট পেপার ও মেশিন জামায়াত সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানি থেকে কেনা হয়েছিল। এ কারণে হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এতে উল্টো নানা গরমিল দেখা দেয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে ভোট গণনার পর শনিবার সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা করা হয়।

 

ফলাফলে দেখা যায়, ১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয়েছে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু এবং জিএস পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হন। তবে ভোটের অস্বচ্ছতা ও গরমিল নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

 

শহীদ রফিক-জব্বার হল: ভুলে পাল্টে যায় জয়ী প্রার্থী

 

ডাইনিং ও ক্যান্টিন সম্পাদক পদে ঘোষিত ফলে দেখা যায়, চার প্রার্থী মোট ৫১৩ ভোট পেয়েছেন, অথচ হলে ভোট পড়েছে মাত্র ৪৬৯টি। পরে তদন্তে জানা যায়, হাতে লেখা ৪২ কে ৮২ হিসেবে পড়ায় অতিরিক্ত ভোট যুক্ত হয়েছে।

 

ফলে আশরাফুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ১৩২ থেকে নেমে আসে ৯২-এ। এতে তার বিজয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং বিজয়ীর নাম পরিবর্তিত হওয়ার কথা স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

 

এ ছাড়া প্রার্থী আবু সায়েমের ভোট ঘোষণায় ১২৩ বলা হলেও ওয়েবসাইটে দেখা গেছে ৭৯ ভোট। এখানেও ৪৪ ভোটের অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে। রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বিষয়টিকে ‘বাংলা সংখ্যাকে ইংরেজি সংখ্যায় ভুলভাবে ধরা’র ফল বলে দাবি করেছেন।

 

জাহানারা ইমাম হল: ৫ ভোট বাড়তি, বিতর্ক এজিএস পদে

 

এ হলে মোট ভোট পড়েছে ২৪২টি। অথচ ঘোষিত ফলে ভোট দেখানো হয়েছে ২৪৭টি—৫ ভোট বেশি। এ নিয়ে রিটার্নিং অফিসার নাসরিন খাতুন কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

 

এজিএস পদে লামিয়া জান্নাত ও সাদিয়া জান্নাত সমান ১১৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। কমিশন ছয় মাস করে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়। কিন্তু লামিয়ার একটি ভোট বাতিল হওয়ায় তিনি আপত্তি জানান। তার দাবি, টিক চিহ্ন সামান্য বক্সের বাইরে চলে যাওয়ায় অযৌক্তিকভাবে ভোট বাতিল করা হয়েছে।

 

মওলানা ভাসানী হল: শূন্য ভোটের অভিযোগ

 

‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থী নীহ্লা অং মারমা প্রথমে শূন্য ভোট পেয়েছেন বলে ফলাফলে দেখানো হয়। কিন্তু তার সহপাঠী রেলং খুমি প্রকাশ্যে দাবি করেন—তিনি নিজ হাতে নীহ্লাকে ভোট দিয়েছেন। ফলে তার ভোট কোথায় গেল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

 

এ অভিযোগে রিটার্নিং অফিসার কাজী মহসিন প্রথমে দাবি করেন, ভুল হওয়ার সুযোগ নেই, সব এজেন্টের সামনেই ভোট গণনা হয়েছে। তবে পরে যাচাই-বাছাই করে স্বীকার করেন যে, টালি শিটের তথ্য ফাইনাল শিটে তোলা হয়নি। পরবর্তীতে সংশোধিত ফলে নীহ্লার ভোট ১৭ দেখানো হয়।

 

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জানান, ভোট গণনায় কোনো ভুল হলে তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার ঠিক করবেন। কমিশন কেবল প্রাপ্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে। ফল নিয়ে আপত্তি থাকলে জাকসুর সভাপতি তথা উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে।

 

তবে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের অনেকেই বলছেন, এসব ভুল কেবল ‘অনিচ্ছাকৃত’ নয়, বরং এটি সুস্পষ্ট অব্যবস্থাপনা এবং সম্ভাব্য কারচুপির বহিঃপ্রকাশ। ফলে ভোট শেষে তিন দিন পরও জাকসু নির্বাচন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা থামেনি।

সব খবর