সর্বশেষ

শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলবাদি প্রভাব

প্রাথমিক থেকে বাদ সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৫১
প্রাথমিক থেকে বাদ সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক

মৌলবাদি চাপের মুখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে সৃষ্ট সংগীত শিক্ষক ও শরীরচর্চা শিক্ষক পদ বাতিল করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও সংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানোর কথা বললেও, ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর আপত্তির সামনে ইউনূস সরকার আবারও নতি স্বীকার করেছে—সমালোচকদের এমন অভিযোগ জোরালো হচ্ছে।

 

গত আগস্টে জারি করা ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা–২০২৫’-এ প্রথমবারের মতো চারটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষক নিয়োগের কাঠামো করা হয়। এর মধ্যে সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রোববার প্রকাশিত সংশোধিত গেজেটে দুটি পদই বাতিল করে বিধিমালাকে আবার দুই ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।

 

বিদ্যালয় অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান জানিয়েছেন সংশোধিত গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই পরিবর্তন ধর্মীয় সংগঠনের চাপের ফল কি না এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বরং সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা খতিয়ে দেখতে পারেন।” তার এই বক্তব্যকেই অনেকেই পরোক্ষ স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখছেন।

 

শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ, সংগীত শিক্ষার পদ বাতিল মানে শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশ, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় ইতিহাসবোধের মতো ক্ষেত্রগুলোতে আরও সংকোচন তৈরি করা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক পর্যায়ে সংগীত শেখানোর দাবি জোরালো ছিল। কিন্তু চাপের মুখে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা মৌলবাদকে আরও শক্তিশালী করবে এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও সঙ্কুচিত করবে।

 

এদিকে, শরীরচর্চা শিক্ষা বাদ দেওয়াকেও অনেকেই অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছেন। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বিকাশে শরীরচর্চার ভূমিকা অপরিহার্য। অথচ মন্ত্রণালয় সেটিও কাগজ থেকে মুছে দিল, যেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে বই আর পরীক্ষাকেন্দ্রিক করে তোলা ছাড়া তাদের অন্য কোনো লক্ষ্য নেই।

 

বিধিমালায় একটি শব্দগত সংশোধনও আনা হয়েছে। আগের নিয়মে ২০% পদ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকদের জন্য, আর বাকি ৮০% “অন্যান্য বিষয়ে” স্নাতকদের জন্য বলা ছিল। “অন্যান্য বিষয়ে” শব্দবন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় নতুন সংস্করণে বলা হয়েছে “বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্যূন স্নাতক ডিগ্রিধারী”। যদিও এই পরিবর্তন সামান্য, কিন্তু সংগীত ও শরীরচর্চা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তই মূল আলোচনার কেন্দ্রে।

 

সমালোচকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা নীতিকে আরও রক্ষণশীল এবং বৈচিত্র্যহীন করে তুলবে। সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সংকুচিত করে সরকার আবারও প্রমাণ করল ধর্মভিত্তিক চাপের মুখে নীতিনির্ধারণে তারা দুর্বল।

সব খবর

আরও পড়ুন

ড্যাফোডিল–সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষের উত্তাপ এখনো ক্যাম্পাসজুড়ে

কাটেনি শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক ড্যাফোডিল–সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষের উত্তাপ এখনো ক্যাম্পাসজুড়ে

সাভারের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর সংকটের সংকেত

শিক্ষার্থীদের সহিংসতা সাভারের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর সংকটের সংকেত

পরিকল্পনাহীন সম্প্রসারণে উদ্বেগ, আসন পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ

উচ্চশিক্ষায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা পরিকল্পনাহীন সম্প্রসারণে উদ্বেগ, আসন পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ

১৩ বছরে কমেছে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকের সংখ্যা, বেড়েছে প্রতিষ্ঠান

শিক্ষক সংকটে দুর্বল ফল শিক্ষা খাতে ১৩ বছরে কমেছে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকের সংখ্যা, বেড়েছে প্রতিষ্ঠান

তিন ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সতর্কতা

তিন ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সতর্কতা

২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাসের হার

শিক্ষায় ‘গলদ’ না অন্য কিছু? ২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাসের হার

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

সারা দেশে ফেল ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী, পাসের হার ৫৮.৮৩%

এইচএসসি ফলাফল প্রকাশ সারা দেশে ফেল ৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী, পাসের হার ৫৮.৮৩%