২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৫০৯টি। পাশাপাশি ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়ে জনমনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও হত্যার ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে সারা দেশে মোট মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০৫টি। এর মধ্যে ডাকাতি ৫৭৮টি, দস্যুতা ১,৮০৩টি, খুন ৩,৫০৯টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২০,৬৯১টি, অপহরণ ১,০১৪টি, পুলিশের ওপর হামলা ৫৭২টি, সিঁধল চুরি ২,৮১৯টি, চুরি ৯,০০৪টি এবং অন্যান্য মামলা ৭৫,৮৬১টি।
এ সময়ে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইন ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। রাজধানীর মিরপুরে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর মেরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএসএস-এর তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে মব সহিংসতা ও গণপিটুনিতে ১৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩১ জন। এ ধরনের ঘটনা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।
৫ আগস্ট সরকার বদলের সময় দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে ৫,৭৬৩টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে ৪,৪২৩টি উদ্ধার হলেও এখনো ১,৩৪০টি অস্ত্র অপরাধীদের হাতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের সক্রিয়তা আরও বাড়াতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা জরুরি।
সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেছেন, অপরাধ দমাতে প্রতিরোধ ও প্রতিকার জরুরি। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, দেশে একটি চক্র অপরাধকে আয়-উপার্জনের উৎসে পরিণত করেছে। আইনজীবী কে এম মাহফুজ মিশু বলেছেন, অপরাধীদের জামিন না পাওয়ার বিষয়ে আদালত ও আইনজীবীদের সজাগ থাকতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানিয়েছেন, গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।