আগামী ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট অঙ্গনে। নির্বাচন ঘিরে একদিকে যেমন ঘোষিত হয়েছে পূর্ণাঙ্গ তফসিল, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে তীব্র বিরোধ ও আইনি জটিলতা। বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও হেভিওয়েট প্রার্থী তামিম ইকবাল। তিনি অভিযোগ করেছেন, সরকারের একটি অংশ নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব খাটাচ্ছে।
তামিমের অভিযোগ: নির্বাচন নয়, ‘সিলেকশন’ চলছে
রোববার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে তামিম বলেন, “বিসিবিতে যা চলছে, তা নির্বাচন নয় বরং সিলেকশন। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে যেসব কাউন্সিলর মনোনীত হয়েছিলেন, তাদের মনোনয়ন সভাপতির স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিসিবি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। অথচ আমিনুল ইসলাম নিজে স্বাক্ষর করে নতুন চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে ডিসিদের (ডেপুটি কমিশনার) মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। “কোন ক্ষমতাবলে তিনি এমন চিঠি পাঠালেন? নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর পরিবর্তন মেনে নেওয়া যায় না।”
তামিমের অভিযোগের তীর শুধু সভাপতির দিকে নয়, বরং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) নির্বাহী পরিচালকের দিকেও। তিনি বলেছেন, বিসিবি নির্বাচনকে সরকারি প্রভাবমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখতে হবে।
সরকারের হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ ইশরাকের হুমকি
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বিসিবির পরিচালক পদে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। ইশরাক বলেন, “বিসিবি নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ স্পষ্ট। অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলর নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে। যদি এমন বাড়াবাড়ি চলতে থাকে, প্রয়োজনে বিসিবি ঘেরাও করা হবে।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, সাবেক পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান এবং সম্ভাব্য পরিচালক প্রার্থী ইসরাফিল খসরুসহ (বিএনপি নেতা আমির খসরুর ছেলে) অনেকে। তারা সবাই সরকারের একাংশের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেন।
পদত্যাগ ও আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা
ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, “সভাপতি কেবল নিজের লোকদের নিয়ে কাজ করছেন। আমি বহুবার চেষ্টা করেও নিজের জায়গা খুঁজে পাইনি। তাই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।”
অন্যদিকে, সাবেক পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান জানিয়েছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকলে আইনি লড়াই শুরু করা হবে।
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে নতুন মোড়
এরই মধ্যে জেলা ও বিভাগীয় অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিসিবি সভাপতির পাঠানো চিঠিকে অবৈধ ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের তপন, লক্ষীপুরের কামরুল, গোপালগঞ্জের খসরু ও রাজবাড়ীর দুলাল এ রিট দায়ের করেন।
রিটের শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্ট সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছে। আদালত জানিয়েছে, আগামী ৬ অক্টোবরের বিসিবি নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন তফসিল ঘোষণা
বিসিবির নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে।
বড় লড়াইয়ের আভাস
বিসিবির ২৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হবে ১৭১ কাউন্সিলরের ভোটে। এর মধ্যে ৭৬ জন ঢাকার ক্লাব থেকে, ১২ জন ক্লাব ক্রিকেট থেকে এবং ১০ জন বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পর্যায় থেকে নির্বাচিত হবেন।
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় লড়াই হবে সভাপতি পদে। বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল—দুজনেই হেভিওয়েট প্রার্থী।
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, আইনি লড়াই এবং সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে এবারের বিসিবি নির্বাচনকে ঘিরে ক্রিকেটাঙ্গনে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।